শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য থেকে একের পর এক সন্দেহভাজন জঙ্গি এবং অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে ভিন্-রাজ্যের পুলিশ। এই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের ‘অসহযোগিতা’ এবং অনুপ্রবেশের প্রশ্নে রাজ্য ও মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে আরও সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, গোটা দেশে জঙ্গি সরবরাহের ‘করিডর’ হিসেবে রাজ্যকে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তার ‘এজেন্সি’ নিয়েছে রাজ্য সরকার! তৃণমূল কংগ্রেস যদিও পাল্টা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এই বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তুলে বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারই চাইলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে পারে।
বিধাননগরে বিজেপির রাজ্য দফতরে সোমবার রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার নানা অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। বিএসএফকে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য রাজ্য জমি দিচ্ছে না বলে একাধিক বার সরব হয়েছে বিজেপি। তাতেই শাণ দিয়ে এ দিন শুভেন্দুর বক্তব্য, “আইন অনুযায়ী, ভারত সরকার সরাসরি কোনও জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না, তা জেলাশাসকের মাধ্যমে করতে হয়। এখানকার জেলাশাসকদের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বা ইশারার বাইরে এক ছটাক জমি অধিগ্রহণ সম্ভব নয়। আর যে মুখ্যমন্ত্রী ২০২১-এ বিধানসভায় বিএসএফের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছিলেন, তিনি কাঁটাতার দিতে জমি দেবেন না।”
এর সঙ্গেই অনুপ্রবেশ প্রশ্নে রাজ্যের ভূমিকাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, “গোটা দেশে জঙ্গি, জেহাদি, মৌলবাদী, রোহিঙ্গা সরবরাহের ‘করিডর’ পশ্চিমবঙ্গ। আর সরবরাহের এজেন্সিটা নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর লোকজন আধার কার্ড বানিয়ে দিচ্ছেন, বাসস্থানের শংসাপত্র দিচ্ছেন।” এই সূত্রেই, বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য অভিযোগে ধৃত মহম্মদ শাদ রাডি যে রাজ্যের ভোটার তালিকাতেও নাম তুলে ফেলেছিল বলে গোয়েন্দা-সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন, সে তৃণমূলকে দু’বার ভোটও দিয়েছিল! এই ধরনের বিষয়কে শুভেন্দু ‘ভোট জেহাদ’ বলেও তোপ দেগেছেন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তিনি তথ্য জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বলেও তিনি।
পাশাপাশি, বিএসএফের সঙ্গে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন কী ভাবে অসহযোগিতা করে, তারও নানা ‘উদাহরণ’ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। বিএসএফ-কে চৌকি করতেও রাজ্য জমি দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, “বিএসএফের সঙ্গে পুলিশ কোনও যৌথ অভিযানে যায় না। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মালদহ, মুর্শিদাবাদে একাধিক সভায় বলেছেন, ‘আমাকে না জিজ্ঞাসা করে বিএসএফের সঙ্গে কোনও পুলিশ যাবে না।’”
তৃণমূল যদিও শুভেন্দুর বক্তব্যে আমল না দিয়ে সীমান্ত-নিরাপত্তার প্রশ্নে পাল্টা কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েই সরব হয়েছে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “বিএসএফ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। কোথাও সমস্যা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কথা বলবে রাজ্য সরকারের সঙ্গে। তার মধ্যে শুভেন্দু কেন রাজনৈতিক বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছেন? যখন বিএসএফের এলাকা ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হল, তখন মনে পড়েনি সমস্যার কথা? মূল সীমান্তে যে সমস্যা আছে, সেটা তো তখন আলোচনা করা হয়নি।”