ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিজেপির আন্দোলন কর্মসূচির রূপরেখা ঠিক করার প্রথম বৈঠকে দেখা গেল না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব বিজেপি। এ বিষয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় থেকে শুরু করে দিল্লি—সর্বত্রই দরবার করেছেন শুভেন্দু। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন কলকাতায় বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে সে বিষয়েই বৈঠক করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ, কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন ও অমিত মালবীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যের পাঁচ সাধারণ সম্পাদক, এক সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) এবং তিন সহ-সভাপতি, তখন সেখানে শুভেন্দু ছিলেন না। তিনি এ দিন বিধানসভা, আরামবাগের খানাকুল এবং ঘাটালের দাসপুরে দলেরই অন্য কর্মসূচিতে ছিলেন।
বিজেপি সূত্রের দাবি, এই বৈঠকে শুভেন্দুকে ডাকা হয়নি। কারণ, বৈঠকটা ছিল কেবল বাছাই করা সাংগঠনিক পদাধিকারীদের নিয়ে। শুভেন্দু বিরোধী দলনেতা হলেও দলীয় সংগঠনে তাঁর কোনও পদ এখনও নেই।
তবে বিজেপি নেতৃত্বের এই ব্যাখ্যার পরেও তর্ক থামেনি। দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে বৈঠকে বিরোধী দলনেতা ডাক পাননিই বা কেন? শুভেন্দুর উত্থানে বিজেপির ‘আদি’ শিবিরের নেতারা অখুশি বলেই কি এমন হল? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘এ রকম কোনও বিষয় নেই। সব বৈঠকে সবাইকে ডাকা হয় না। সাংগঠনিক পদাধিকারীদের বৈঠক এবং পরিষদীয় বা সংসদীয় দলের বৈঠক আলাদাই হয়। কাল বা পরশু কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর বৈঠক হওয়ার কথা।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে এক নেতা ‘আদি’ শিবিরের বদলে ‘নব্য’ শিবিরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মতে, প্রার্থী এবং আসন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ‘নব্য’রা বেশি প্রাধান্য পাওয়াতেই ভোটে দল হেরেছে। ওই বৈঠকেই আর এক নেতা বলেন, আসন ধরে ধরে ভোটের ফল বিশ্লেষণ করা দরকার। তা হলে দেখা যাবে, বিভিন্ন আসনে আলাদা আলাদা কারণে ভোটে হার হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যাঁদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই জিততে পারেননি।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ভোট-পরবর্তী হিংসা এবং টিকা-দুর্নীতির প্রতিবাদে আগামী ২৩ জুন কলকাতা-সহ কয়েকটি জেলায় সমাবেশ হবে। জেলা, ব্লক এবং বুথ স্তরে ওই কর্মসূচি চলবে ২৫ জুন পর্যন্ত। সব কর্মসূচিতেই কোভিড বিধি মেনে চলা হবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ রাজ্যের ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগকে গোটা দেশেই ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। এর আগে অন্যান্য রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও এ বিষয়ে ভিডিয়ো বৈঠক করেছেন বিজেপির এ রাজ্যের নেতারা। এ বার সরাসরি রাস্তায় নামছে দল।
বিজেপি সূত্রের আরও খবর, বৈঠকে বলা হয়েছে, দলের ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং সাংসদ-বিধায়কদের নিজেদের এলাকায় থাকতে হবে। দলের তরফে ২১ জুন রাজ্য থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত বিশ্ব যোগ দিবস পালনেও জোর দিয়েছেন শিবপ্রকাশেরা।