মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
রাজ্যপালের সুপারিশে নবান্নের বৈঠকে ডাকা হয়েছে তাঁকে। এমনটাই জানানো হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। কিন্তু সঙ্গে দেওয়া হয়নি বৈঠক সংক্রান্ত আগাম কোনও তথ্য। তাই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বৈঠককে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে না-ও যেতে পারেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। লোকায়ুক্ত, তথ্য কমিশনার, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী ২৩ মে নবান্নের ১৪ তলার সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠক ডাকা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকার কাছ থেকে তিনটি চিঠি পান বিরোধী দলনেতা। এই চিঠিগুলিতে বলা হয়, আগামী ২৩ মে বিকেল চারটের এবং সাড়ে চারটের সময় নবান্নের ১৪ তলায় কনফারেন্স হলে লোকায়ুক্ত, তথ্য কমিশনার, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বৈঠক ডাকা হয়েছে। রাজ্যপালের সুপারিশে বিরোধী দলনেতাকে ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
কিন্তু এমন চিঠি পাওয়ার পরেই বৈঠকে যোগদান নিয়ে নিজের কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। পাল্টা স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি পাঠিয়ে সেই সব শর্তের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন নন্দীগ্রাম-বিধায়ক। তিনি বলেছেন, ‘‘বলা হয়েছে, রাজ্যপালের সুপারিশে আমাকে ডাকা হয়েছে। রাজ্যপালকে এ ভাবে কোট করা যায় না। আর বৈঠক সংক্রান্ত তথ্য ও নথি আমি চেয়েছি। সেই নথি না পেলে আমি কোনও ভাবেই বৈঠকে যোগ দেব না।’’
শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘বিধানসভায় স্পিকারের ঘরে আগে যে মিটিং ডাকা হয়েছিল, তার পদ্ধতি মানা হয়নি বলেই এই বৈঠক পুনরায় করতে হচ্ছে। আমার বক্তব্য হল, যখন সিবিআই ডিরেক্টর নিয়োগ হন, যখন জাতীয় লোকায়ুক্ত কমিশনর নিয়োগ হন, তখন লোকসভার বিরোধী দলনেতা-সহ অন্যান্য যাঁরা সদস্য থাকেন তাঁদের কাছে সব নথিপত্র দেওয়া হয়। আবেদনকারীদের নাম বা কী কী যোগ্যতা থাকলে নেওয়া যেতে পারে, সেই সব বিষয়গুলি ভারত সরকার বা বিভিন্ন রাজ্য সরকার বিরোধী দলনেতাকে জানায়। এটাই সাংবিধানিক পদ্ধতি। যা গত বার মানা হয়নি।’’
শুভেন্দুর প্রশ্ন, ‘‘এ বারও সংবিধান মেনে বৈঠক না হলে আমি ওই বৈঠকে যাব না। আমি কেন কোনও অসাংবিধানিক বৈঠকে যোগ দিতে যাব?’’ সূত্রের খবর, শনিবার বিকেল পর্যন্ত নবান্ন থেকে কোনও নথি বা তথ্য এসে পৌঁছায়নি বিরোধী দলনেতার দফতরে। আর সোমবার বিকেলে নবান্নে এই বৈঠক হবে। তাই প্রথম বার নবান্নে ডাক পেলেও, মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি না-ও হতে পারেন তাঁর নন্দীগ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী।
প্রসঙ্গত, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা বিধানসভার স্পিকারেরও। রীতি অনুযায়ী, এই ধরনের সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিযয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও বিধানসভার স্পিকারকে নিয়ে গঠিত কমিটি। কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কমিটিতে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা এবং লোকসভার স্পিকার। দিল্লিতে ইদানীং এই ধরনের বৈঠকগুলি হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের অফিসে। রাজ্যের ক্ষেত্রে এই প্রথম বার বিধানসভা চত্বরের বাইরে বেরিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে এই বৈঠক বসতে চলেছে।