বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
বিজেপি-বিরোধী সব দলকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জোট গড়ার কথা বলছেন, তাঁর রাজ্যে তখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অন্য এক ‘জোট’-এর ছবি দেখা গেল শনিবার। মহার্ঘ ভাতার দাবিতে কর্মচারী সংগঠনের যৌথ মঞ্চের সভায় কংগ্রেস ও সিপিএমের উপস্থিতিতে সেই বার্তা দিয়ে বিরোধী দলনেতা, বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘আগে অত্যাচারী তৃণমূলকে সরাতে হবে। তার পর নিজের দলের জন্য ভোট চাইতে হবে।’’
অন্য দিকে, এ দিনই তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই তিন বিরোধীর আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি কখনও পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলে না। রাজ্যের স্বার্থেও কথা বলে না।
মহার্ঘ ভাতার দাবিতে শুরু আন্দোলন ১০০ দিনে পা দেওয়ায় শনিবার সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের ডাকে মিছিল হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়া পর্যন্ত। কালীঘাট পর্যন্ত মিছিলে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পরে হাজরা মোড়ে সভা করেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন কর্মচারী সংগঠনের যৌথ মঞ্চের সেই কর্মসূচিতে হাজির হন বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের নেতারা। সেখানে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্যের অত্যাচারী এই শাসককে প্রাক্তন করতেই হবে।’’ বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, ‘‘নিজের দলের জন্য ভোট চাওয়ার আগে বলুন, ‘নো ভোট টু মমতা’। কে জিতবে তা ভোটার ঠিক করবে।’’ কর্মচারীদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘‘লাগাতার কর্মবিরতির কর্মসূচি নিন। আমরা পাশে আছি।’’ শুভেন্দুর সঙ্গে এ দিন সভায় আসেন প্রাক্তন তৃণমূল নেত্রী সোনালি গুহ। তিনি বলেন, ‘‘দিদি খাবে আর তার ভাইপোই শুধু খাবে, তা হবে না। সবাই খাবে।’’
সরকারি কর্মচারীদের সমর্থনে সভায় ছিল সিপিএমও। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা তোয়ালে মোড়া টাকা নয়, এটা আপনাদের হকের টাকা। বকেয়া ডিএ, শূন্যপদে নিয়োগ-সহ যে দাবিগুলিতে আপনারা লড়াই করছেন, সেই লড়াইয়ে আমরা পাশে আছি।’’ দলের আর এক নেতা কলতান দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘যে মানুষ আগে প্ল্যাকার্ডে সততার প্রতীক লিখতেন, আজ তাঁরাই লিখছেন চোর ধরো, জেলে ভরো।’’
মঞ্চে হাজির কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানও বলেন, ‘‘এই মুখ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাই, তিনিই বাম আমলে বলেছিলেন, যে সরকার ডিএ দিতে পারে না, সেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।’’ কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচীও এই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীকেনিশানা করেছেন।
এ দিকে, মুর্শিদাবাদে জনসংযোগ কর্মসূচিতে বিরোধীদের পাল্টা বিঁধেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিম, বিমান বসুরা কখনও নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কথা বলেন না। এঁদের বিরুদ্ধেও বিজেপি মুখ খোলে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কখনও রাজ্যের সাধারণ মানুষের বঞ্চনা নিয়ে মুখ খুলতে দেখেছেন?’’ জবাবে অধীর বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দিদির আমলেই বিজেপির হাত বেশি শক্ত হয়েছে। আরএসএস-এর সংগঠন সাড়ে তিনশো থেকে চার হাজার হয়েছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেকের বাড়ির কাছ দিয়ে মিছিল গেলেও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়নি। তবে অভিষেকের বাড়ির থেকে একটু এগিয়ে তৃণমূলের পার্টি অফিসের সামনে মিছিল থেকে ‘চোর’, ‘চোর’ স্লোগান ওঠে। পরে যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি বা ধর্মঘটের কথা বিবেচনা করছি।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কর্মসূচিটি সম্পর্কে বলেন, ‘‘সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের অতৃপ্ত আত্মারা ওই সভায় ছিলেন। কর্মচারীদের দাবির বদলে সরকারকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে।’’ রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার অভিযোগে সরব হয়েছেন মন্ত্রী শশী পাঁজাও। তাঁর দাবি, ‘‘কর্মচারীদের দাবি সম্পর্কে সরকার সহমর্মী। কিন্তু কেন্দ্রের কাছে আটকে থাকা প্রাপ্যের কথা মাথায় রাখা উচিত।’’