বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের আয়ু আর ছ’মাস। এ বার রাজ্যে সরকার বদলের পাল্টা সময় বেঁধে দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। বুধবার নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ভোট প্রচারে শুভেন্দুর দাবি, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় আসছে বিজেপি। তার ঠিক তিন মাসের মাথাতেই রাজ্যে সরকার বদল হবে।’’
এর আগে শুভেন্দু তারিখের পরে তারিখ দিয়েছেন, কিন্তু তেমন কিছুই ঘটেনি। এ দিন ফের পটাশপুরের মথুরায় বিজেপির কর্মিসভায় শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট বিজেপির কাছে ‘ডু অর ডাই’। ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে এ বার পঞ্চায়েতে লড়ছে বিজেপি।’’ তার পরে তিনি যোগ করেন, ‘‘আগামী লোকসভায় বাংলায় বিজেপি ৩৬টা আসন পাবে বাংলায়। তার তিন মাস বাদে বাংলা থেকে তৃণমূলের সরকার চলে যাবে।’’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই রাজ্য থেকে ৩৫টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা এর মধ্যেই বেঁধে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপিকে।
রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, “সবচেয়ে বড় ফ্লপ জ্যোতিষী উনি। কোনও হিসেবই মেলে না। আগে লোকসভা ভোটে তিনটে আসনে জিতে দেখাক বিজেপি।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘বিজেপি যে বড় বড় কথা বলছে, তারা আগে জবাব দিক, দুর্নীতির তদন্তে লোকজন ধরা পড়ার পরেও মাথা ধরে টানা হচ্ছে না কেন? চিটফান্ড, নারদ-কাণ্ডে চার্জশিট হল না কেন?’’
পঞ্চায়েতের প্রচারে এ দিন পটাশপুর ও রামনগরে সভা করেন শুভেন্দু। বিকেলে হেঁড়িয়ায় পদযাত্রাও হয়। রামনগরের সভামঞ্চ থেকে শুভেন্দুর দাবি, “বিজেপিকে জেতাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছি না। চাইছি পঞ্চায়েত ভোট যাতে অবাধ এবং সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য।” তার পরে তাঁর সংযোজন, “গ্রামের মানুষ যা চাইবেন, ভোটের ফলাফল সেটাই হবে।” কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “আরাবুল ইসলাম, সওকাত মোল্লাদের মতো গুন্ডাদের কোমরে ঘা মেরে বাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে দিতে বলব।” তৃণমূল অবশ্য বলছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও ভোটের ফল কী হয়, সেটা ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই এ দিন সভা করেছেন শুভেন্দু। তাঁর আর্জি, “বিজেপিকে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আনুন। পার্টি অফিস বা পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে নয়, গ্রাম সংসদে সভা বসিয়ে আবাসের তালিকা বানাব। না থাকবে ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত।” ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর কথা মনে করিয়ে শুভেন্দুর আরও ঘোষণা, “বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলে সব মা, দিদিদের দু’হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।” তৃণমূল মুখপাত্র কুণালের পাল্টা খোঁচা, “এক সময় শুভেন্দুই লক্ষ্মীর ভান্ডারের সমালোচনা করতেন। আর এখন তাকে নকল করতে চাইছেন।”
হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণে মুখ্যমন্ত্রীর চোট পাওয়া নিয়েও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “ভোট এলেই পায়ে চোট! তৃণমূলের প্রতীক বদলেছে নাকি! ঘাসফুল বদলে হুইলচেয়ার!” রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির পাল্টা বলেন, “মমতাকে কটূক্তি করলে কী পরিণাম হয়, তা বিধানসভা ভোটে বিজেপি নেতারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।”