শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য তথ্য নির্বাচন কমিশনার পদে রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি বীরেন্দ্রকে নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে এলেন শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু জানান, ওই পদে বীরেন্দ্রর নামে অনুমোদন না দেওয়ার জন্য রাজ্যপালের কাছে অনুরোধ করেছেন তিনি।
শনিবার বিকেলে রাজভবনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা জানান, রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ ক্ষণ কথায় হয়েছে। তবে কী নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক, সেই বিষয়ে শুভেন্দু প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। শুধু জানান, মুখ্য তথ্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘এক জন রিটায়ার্ড আইপিএসের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আমি রাজ্যপালকে বলেছি, তাঁর নামে যাতে অনুমোদন না দেওয়া হয়। আমি যুক্তি দেখিয়েছি, এক জন রিটায়ার্ড লোককে বেছে নেওয়া ঠিক হয়নি। দ্বিতীয়ত, কয়েকটা হ্যান্ডবিলের মতো কাগজে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল। যেগুলি কার্যত শাসকদলের লিফলেট।’’
শুভেন্দুর যুক্তি, মুখ্য তথ্য কমিশনার নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারের উচিত ছিল জাতীয় স্তরে বিজ্ঞাপন দেওয়া। তার পর আবেদনপত্র ভাল করে খতিয়ে দেখে প্যানেল বানিয়ে কোনও সরকারি দফতরে বৈঠক ডাকা উচিত ছিল। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চেম্বারে কোনও বৈঠকে বিরোধী দলনেতা যাবে না। কারণ এই ধরনের মিটিং সংবিধান প্রদত্ত মিটিং। ইনফর্মেশন কমিশনার বলুন বা মানবাধিকার কমিশনার, এগুলো মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকার দয়া করে বিরোধী দলনেতাকে ডাকছেন না।’’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের মুখ্য তথ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। প্রোটোকল মেনে মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং পরিষদীয় মন্ত্রীর বৈঠকে বসার কথা ছিল। সেই বৈঠকের কিছু ক্ষণ আগেই শুভেন্দু জানিয়ে দেন, তিনি ওই বৈঠকে যাচ্ছেন না। তাঁর অভিযোগ, ওই পদে কে বসবেন, সেই নাম আগেই স্থির হয়ে গিয়েছে। এখন নামমাত্র বৈঠক ডাকা হয়েছে। তাই, তিনি বৈঠকে থাকছেন না। ওই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মুখ্য তথ্য নির্বাচন কমিশনার পদে বীরেন্দ্রর নামে সিলমোহর মেলার পরেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে রাজভবনে। তার প্রেক্ষিতে টুইটে শুভেন্দু লেখেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট আবেদনগুলি সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছে। ইতিমধ্যে পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীকে অনুমোদন করে দেওয়া হয়েছে।’’
নবান্নের ওই বৈঠককে ‘প্রহসনমূলক প্রক্রিয়া’ বলে মন্তব্য করে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিবকেও বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। এ বার রাজভবনেও নিজের আপত্তির কথা জানালেন তিনি। এখন দেখার শুভেন্দুর আপত্তির পর রাজ্যপাল মুখ্য তথ্য নির্বাচন কমিশনার পদে বীরেন্দ্রর নামে অনুমোদন দেন কি না। শুধু তা-ই নয়, গত কয়েক দিনে রাজভবন ও নবান্নের সম্পর্ক যে ভাবে অন্য দিকে মোড় নিয়েছে, তাতে প্রশাসনিক মহলের সংশয়, রাজ্যপাল বোস বীরেন্দ্রর নাম মেনে না-ও নিতে পারেন। যদি তাই হয়, তা হলে আবার নতুন করে নবান্ন বনাম রাজভবনের মধ্যে ‘সংঘাতের পরিবেশ’ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
রাজ্যপালের কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। কোচবিহারের দিনহাটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িতে হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে শুভেন্দু জানান, আনন্দের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। শাসকদলের বিরুদ্ধে দিনহাটায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়িতে হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে হামলা রয়েছে। রাজ্য পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। জঙ্গলরাজ রাজ চলছে। আমজনতার কোনও নিরাপত্তা নেই। তবে প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ওরা শুরু করেছে, আমরা শেষ করব।’’
সম্প্রতি বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপাল বিধানসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকার প্রশংসা করেন। শুভেন্দু সেই সময়ে তাঁর বিরোধিতা করেন। শনিবার আবারও শুভেন্দু এ বিষয়ে রাজ্যপালকে জানিয়ে এলেন। এখন দেখার, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজবভন কোনও বিবৃতি জারি করে কি না!