বুধবার নন্দীগ্রামের অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
এর আগে তিনি বলার দিন তিনেকের মধ্যে গ্রেফতার হয়েছিলেন ১১ জন। আবারও ভবিষদ্বাণীর ঢঙে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, নন্দীগ্রামের দলীয় কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনের মামলায় আরও ১১ জনকে গ্রেফতার করা হবে। তাঁর আরও ইঙ্গিত, এ বার ধৃতদের তালিকায় থাকবেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা এ বারের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানও।
ভোটের ফল প্রকাশের পরে গত ৩ মে নন্দীগ্রামের চিল্লগ্রামের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতির উপরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ১৩ মে হাসপাতালে দেবব্রত মারা যান। রাজ্যে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র একাধিক ঘটনার সঙ্গে দেবব্রত খুনেরও তদন্ত করছে সিবিআই। বুধবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের হরিপুরে শীতবস্ত্র এবং শঙ্খ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসে দেবব্রত হত্যা মামলার প্রসঙ্গ তুলেই শুভেন্দু বলেন, ‘‘দেবব্রত মাইতিকে শহিদ করে ভেবেছিল পার পেয়ে যাবে। ১১টা গুন্ডাকে জেলের ভিতর ঢুকিয়েছি। জাহাজ বাড়ি মালিক-সহ ১১টা গুন্ডা ছাড়া রয়েছে। ওদেরও ভিতরে ঢোকাব।’’
গত ৬ অক্টোবর, মহালয়ার দিনও নন্দীগ্রামে এক অনুষ্ঠানে এসে শুভেন্দু এই মামলায় ১২ জনকে জেলে ঢোকানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তারপরই ৯ অক্টোবর সিবিআই ১১ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। ধৃতেরা বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন। ফলে শুভেন্দুর এ দিনের মন্তব্যের পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ বিজেপি বিধায়ক আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন কী করে! তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর রায়ের সরাসরি অভিযোগ, ‘‘আমরা তো বারবার বলেছি, সিবিআই, ইডি-র মতো সংস্থা বিজেপির নির্দেশে কাজ করছে।’’
শুভেন্দু এ দিন জাহাজ বাড়ির মালিকের গ্রেফতারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। জাহাজ বাড়ির মালিক হিসেবে নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেতা সুফিয়ানই পরিচিত। এই মামলায় তাঁকে ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। গ্রেফতার হয়েছেন তাঁর জামাই। সুফিয়ানও বলছেন, ‘‘বিজেপি রাজনৈতিকভাবে পেরে উঠছে না। তাই সিবিআইকে দিয়ে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করাতে চাইছে।’’
উল্লেখ্য, জেলা বিজেপি নেতৃত্ব আগে জানিয়েছিলেন, দলের তরফে এই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে ১৫ জনের নাম আদালতে জমা দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১১ জন ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি আছেন ৪ জন। কিন্তু শুভেন্দু যে আরও ১১ জনকে গ্রেফতারের কথা বলছেন?
এ প্রসঙ্গে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েকের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, দেবব্রত মাইতিকে ২৫-২৬ জন মিলে খুন করেছে। জাহাজ বাড়ির মালিক সবটাই জানেন। তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।’’
তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর অবশ্য বলছেন, ‘‘বিজেপি নেতাদের দেওয়া তালিকা মিলিয়ে মিলিয়ে হানা দিচ্ছে সিবিআই৷ তলব করছে, গ্রেফতার করছে। বিজেপির নেতারাই তো এখন তার প্রমাণ দিচ্ছেন।’’