বাজেট অধিবেশনে মারামারির ঘটনার জেরে শুভেন্দু-সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিলম্বিত করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা সংক্রান্ত মামলায় দু’পক্ষকে গোটা সমস্যা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে এখনই হস্তক্ষেপ করতে রাজি হলেন না বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তবে যে পদ্ধতি মেনে বিজেপি বিধায়কদের নিলম্বিত করা হয়েছে, সেই পদ্ধতিতে পুনরায় মামলা করা হলে শুনতে রাজি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাজেট অধিবেশনে মারামারির ঘটনার জেরে শুভেন্দু-সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়ককে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিলম্বিত করেছেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে বিধানসভার সচিব বিরোধী দলনেতাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সাসপেনশন চলাকালীন সংশ্লিষ্ট বিধায়করা বিধানসভার ভিতরের লবিতে যেতে পারবেন না। বিধানসভায় নিজের ঘরেও প্রবেশ করতে পারবেন না বিরোধী দলনেতা। স্পিকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন বিজেপি বিধায়করা।
বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, বিধানসভার নিয়মভঙ্গ হলে সদস্যদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে স্পিকারের। স্পিকারের ওই সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। এজি-ই বলেন, মামলাকারীরা স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা না করে যে পদ্ধতি মেনে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটি চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন।
এজি-র এই মন্তব্যের পর বিচারপতি মান্থার মন্তব্য, ‘‘বেটার লেট দ্যান নেভার। আমি স্পিকারকে বলতে পারি না, উনি কী ভাবে বিধানসভা চালাবেন। আর স্পিকারও আমায় বলতে পারেন না, আমি কী ভাবে কোর্ট চালাব।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘অভিমান থাকতে পারে, কিন্তু ইগো বাদ দিন। বিধানসভা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য শাসক ও বিরোধী দু’পক্ষকেই দরকার। তাই, সব সমস্যা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে ফেলুন।’’
শুক্রবার থেকে রাজ্য বিধানসভায় বাদল অধিবেশন শুরু হবে। তার আগে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে স্পিকারের সঙ্গে মামলাকারীদের আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন বিচারপতি। তার পরেও যদিও বিবাদ না মেটে, তা হলে স্পিকারের ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করতে বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এই মামলা আমি খারিজ করছি না। কিন্তু আগে নিজেদের মধ্যে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। যদি তাতেও সমাধান না-হয়, তা হলে সোমবার নতুন করে মামলা করুন। ওই মামলা মঙ্গলবার শুনব।’’
সূত্রের খবর, শুনানি চলাকালীনই বিচারপতির এই পরামর্শের কথা শুভেন্দুকে ফোন করে জানান তাঁর আইনজীবী। বিরোধী দলনেতা তাতে রাজিও হয়েছেন বলে খবর। এখন দেখার, বিধানসভায় ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শুভেন্দু-সহ পাঁচ বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে স্পিকার আলোচনায় বসেন কি না। আর বসলেও আলোচনার মাধ্যমে ওই বিবাদ মেটে কি না।