শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি-তদন্ত এবং সেই সংক্রান্ত মামলা শুরু হওয়ার পরে একাধিক বার নেতৃত্বের কারও কারও মুখে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা শোনা গিয়েছে। বিচার ব্যবস্থার একাংশ ‘বিজেপির হয়ে’ কাজ করছে বলে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিচার ব্যবস্থার উপরে একের পর এক আক্রমণ করে চলেছে। এ বিষয় সুপ্রিম কোর্টের ‘হস্তক্ষেপ’ও দাবি করেছেন শুভেন্দু। তৃণমূল অবশ্য ‘প্রতিহিংসা’র অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের এক বিচারপতির পরিবারকে ‘হেনস্থা’ করার যে অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক আবার সামনে এসেছে, ওই ঘটনায় আদালতের নির্দেশেই তদন্ত হচ্ছে বলে তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য।
বিজেপি-র কিসান মোর্চার ডাকে সোমবার প্রতিবাদ মিছিল এবং সভা ছিল বীরভূমের সাঁইথিয়ায়। সেই সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সপারিষদ চুরি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছে বিচার ব্যবস্থা। তাই বিচার ব্যবস্থার উপরে তৃণমূলের একের পর এক আক্রমণ নেমে এসেছে।’’ কলকাতা হাই কোর্টের একাধিক বিচারপতির নাম করে এ দিন শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ওই বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ‘অশ্রাব্য’ ভাষায় আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ‘ভাইপো’। এক বিচারপতির বাড়িতে পোস্টার সাঁটানোর প্রসঙ্গেও তৃণমূলকে এ দিন তোপ দেগেছেন তিনি।
সম্প্রতি সল্টলেকের একটি পরিবারের গোলমালের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে-কে তলব করেছে সিআইডি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, তাঁকে তিন বার তলব করা হয়েছে। তিনি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী। আইনজীবীদের একাংশের দাবি, ওই আইনজীবী তদন্তে সহযোগিতা করলেও তাঁকে ‘হেনস্থা’ করার উদ্দেশ্যে বারবার তলব করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গও এ দিন উঠে এসেছে বিরোধী দলনেতার বক্তৃতায়। শুভেন্দু বলেন, ‘‘সম্প্রতি বিচারপতি অমৃতা সিংহের আইন মেনে সওয়াল-জবাব শুনে সিআইডি দিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে মমতা সরকার। কী ভাবে বিচারপতিদের আক্রমণ করা হচ্ছে, দেখুন! এমনকি, তাঁর নিরাপত্তারক্ষীও প্রত্যাহার করেছে তৃণমূল সরকার।’’
প্রতিহিংসার অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘বিচারপতির আত্মীয় বলে তো আর কেউ ছাড় পেতে পারেন না। যে তদন্তের কথা বলা হচ্ছে, তা তো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চলছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অন্য মামলার ক্ষেত্রে যেমন আদালতের নির্দেশ মাথায় তুলে রাখা হয়, এখানে তা হবে না কেন? বাম জমানায় ‘বিচারপতি লালা, বাংলা থেকে পালা’ স্লোগান উঠেছিল, তা কি সকলে ভুলে গিয়েছেন?’’
শুভেন্দু আরও দাবি করেছেন, নন্দীগ্রামের বিধানসভা নির্বাচনের ফল সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্টের এক বিচারপতির উপরে ‘আক্রমণে’র জন্য তিনি এজলাস ছেড়ে দেন। তার জন্য সরকারকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। বিরোধী দলনেতার আরও দাবি, ‘‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের ভয় দেখিয়ে রেখেছে এই সরকার।’’ শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আমি এই সভা থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করছি, মেরুদণ্ড সোজা রাখা বিচারপতিদের উপরে যে-ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিতে এবং তাঁর ভাইপোর নির্দেশে পুলিশ-সিআইডি ও দলকে দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
শাসক দল ‘প্রতিহিংসা’র অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেও বিচারপতির আইনজীবী-স্বামীকে সিআইডি তলব ঘিরে জলঘোলা হয়েই চলেছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও অভিযোগ, ‘‘বিচারপতি সিংহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ বা পর্যবেক্ষণ শাসক দলের পছন্দ হয়নি। তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর স্বামী যিনি আইনজীবী, তাঁকে সিআই়ডি এখন ডেকে পাঠাচ্ছে। যার কাজ বা কথা পছন্দ হবে না, বিজেপির মতো তৃণমূলও সেখানে নিজেদের হাতে থাকা সংস্থাকে লাগিয়ে দেবে। দুর্বিষহ পরিস্থিতি!’’ তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও কিন্তু ভাল নেই।’’