শালবনির সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে মিছিলের পুরোভাগে দীপক সরকার।
তিনি দলের রাজ্য সম্পাদক, অন্যতম লড়াকু মুখ। তাঁর উপর গুরুদায়িত্ব। তাও বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে সিপিএম এ বারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে। নিজের পুরনো কেন্দ্র নারায়ণগড়ে প্রার্থী হয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। জোটের জট কাটাতে রাজ্যস্তরে এখন শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে। তারই মধ্যে নিজের কেন্দ্রে নির্বাচনী প্রচারে আসছেন সূর্যবাবু। দু’দিনে সব মিলিয়ে ন’টি কর্মিসভা করার কথা তাঁর।
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “সূর্যকান্ত মিশ্র নারায়ণগড়ে আসছেন। আগামী দু’দিন তাঁর প্রচারসূচি রয়েছে।’’ দলের এক সূত্রে খবর, আজ, সোমবার সকালে নারায়ণগড়ে পৌঁছবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। সকাল ১০টায় দশগ্রামের কাছে তাঁর প্রথম কর্মিসভা। এরপর একে একে চকমুকুন্দ, কুণারপুর। দুপুরে বেলদা জোনাল কার্যালয়ে জিরিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটেয় ফের কর্মিসভা তরুয়ায়। তারপর রামনগর, নয়াবসানে।
পরের দিন অর্থাত্, মঙ্গলবার সকালে প্রথমে বেলদা বাজারে, পরে নারায়ণগড় বাজারে কর্মিসভা হবে। দু’জায়গাতেই সূর্যকান্তবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর খড়্গপুরে চলে যাওয়ার কথা। সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। খড়্গপুর থেকে ফিরে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ পচাইগড়ে কর্মিসভা করবেন। সভা সেরে তবে কলকাতায় ফেরা।
জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছেন, এই তো শুরু। এরপরে আবারও নারায়ণগড়ে আসবেন সূর্যকান্তবাবু। অবশ্য সেই সূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সিপিএমের বেলদা জোনাল কমিটির সম্পাদক মদন বসু বলেন, “পরের সূচি শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।” সূর্যকান্তবাবুর এই দু’দিনের প্রচারসূচিকে সামনে রেখেই নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলতে চাইছে সিপিএম। দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, দু’দিনে ন’টি কর্মিসভা করার ফলে দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা উজ্জীবিত হবেন। উত্সাহিত হয়ে তাঁরা আরও বেশি করে প্রচারে ঝাঁপাবেন।
শুরু থেকেই নারায়ণগড়ের প্রার্থী হিসেবে সূর্যকান্তবাবুকে চেয়ে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। যাদবপুরে তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথা উঠেছিল। অবশ্য সিপিএমের এই পলিটব্যুরো সদস্য দলের অন্দরে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ভোটে দাঁড়াতে হলে তিনি নারায়ণগড় থেকেই দাঁড়াবেন, অন্যত্র নয়।
দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগড় থেকে জিতেছেন সূর্যকান্তবাবু। অবশ্য গত বিধানসভা নির্বাচন ছিল বড় ধাক্কা। মাত্র সাত হাজার ভোটে জিতেছিলেন তিনি। তারপর থেকে রক্তক্ষরণ অব্যাহত। ক্রমেই ভোট কমেছে সিপিএমের। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে নারায়ণগড় এলাকায় বামেরা পিছিয়ে প্রায় ২৬ হাজার ভোটে। সামনে যে কঠিন লড়াই তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না জেলা সিপিএমের। নেতৃত্ব অবশ্য প্রকাশ্যে তা মানছেন না। তাঁদের দাবি, লোকসভা ভোটে প্রহসন হয়েছিল।
মাস কয়েক আগেও নিজের নির্বাচনী এলাকায় জাঠা করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন সূর্যবাবু। ভোটে কী হবে? তরুণ রায়ের জবাব, “ওখান থেকে এ বার আমরা হইহই করে জিতব!” শুধু নারায়ণগড় নয়, জেলার সর্বত্রই এ বার ছোট ছোট কর্মিসভার উপর জোর দিচ্ছে সিপিএম। ‘হেভিওয়েট’ নেতারা কবে কোথায় আসবেন তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে জেলা নেতাদের নিয়ে বিধানসভা এলাকার ভিত্তিতে কর্মী বৈঠকের তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মদন ঘোষ, দীপক সরকার, রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ রায়ের মতো নেতারা।
তবে সূর্যবাবুকে জেলার অন্যত্র প্রচারে বেশি পাওয়া যাবে না বলে ধরেই নিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সেই মতো চলছে ভোট প্রস্তুতি। দলীয় সূত্রে খবর, জেলা নেতারা সূর্যবাবুকে জানিয়েছেন, নারায়ণগড়েও তাঁকে বেশি প্রচার করতে হবে না। তাঁদের দাবি, কয়েকটি এলাকা গিয়ে সভা-মিছিল করলেই হবে। কারণ, ইতিমধ্যে তাঁরা মানুষের সাড়া পেয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৯টি আসনের মধ্যে ১০টি পেয়েছিল বামেরা। নেতৃত্বের একটা বড় অংশই মনে করছেন, ঠিকঠাক ভোট হলে আসন সংখ্যা খুব বেশি কমবে না।
অবশ্য একান্তই দলের এই প্রাথমিক পর্যালোচনা সামনে আনতে রাজি নন বাম নেতৃত্ব। সিপিএম জেলা সম্পাদক তরুণবাবু বলেন, “জনগণ শেষ কথা বলবেন।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা মেদিনীপুরের প্রার্থী সন্তোষ রাণারও এক কথা, “গণতন্ত্রে তো জনগণই শেষ কথা বলেন।”