ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় (টেট) সফল প্রার্থীদের নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন স্তরে মামলার পর মামলায় নাজেহাল হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিধানসভার ভোট শুরুর মুখে সেই নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বস্তি পেল তারা।
সর্বোচ্চ আদালত বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিয়েছে, টেট পাশ করা প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে-রায় দিয়েছে, সেই রায়ের ক্ষেত্রে তারা আর কোনও রকম হস্তক্ষেপ করতে চায় না। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের মতে, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ টেট-নিয়োগ নিয়ে যে-রায় দিয়েছে, তাতে কর্মপ্রার্থীদের জন্য যথেষ্ট সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। তার পরেই মামলাকারীরা তাঁদের আর্জি প্রত্যাহার করে নেন। শিক্ষা ও আইন শিবিরের অভিমত, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে নিয়োগের জট কেটে গেল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত নভেম্বরে ঘোষণা করেছিলেন, ২০১৪ সালের টেটের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করা প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়োগ করা হবে। প্রথমে নিয়োগ হবে ১৬,৫০০ জনের। সেই অনুযায়ী ১৬ ফেব্রুয়ারি মেধা-তালিকা বেরোয়। কিছু চাকরিপ্রার্থী নিয়োগপত্রও পান। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টেটের পূর্ণাঙ্গ মেধা-তালিকা দেয়নি বলে অভিযোগ তুলে মামলা হয় হাইকোর্টে।
প্রথমে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্টের একক বেঞ্চ। হাইকোর্ট জানায়, ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মেধা-তালিকা প্রকাশ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ১৩ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ মেধা-তালিকা প্রকাশ করে। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগের উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে দেয়। তার পরেই হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যান কিছু কর্মপ্রার্থী। মামলার আবেদনকারীদের পক্ষে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন জানান, এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ই বহাল থাকল।
শীর্ষ আদালতে নিয়োগের জট কাটলেও চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পরেও টেটের মেধা-তালিকায় নাম থাকা সব প্রার্থী এখনও চাকরি পাননি। সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায়ের পরে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত হবে তো? তাঁদের অভিযোগ, টেট-উত্তীর্ণদের প্যানেলে ঠাঁই পাওয়া কিছু প্রার্থী নিয়োগপত্র পেয়ে স্কুলে যোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই একই প্যানেলে নাম থাকা সত্ত্বেও প্রায় আট হাজার চাকরিপ্রার্থী এখনও নিয়োগপত্র পাননি। এই অভিযোগে গত এক মাস ধরে বিভিন্ন জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভরত চাকরিপ্রার্থীরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জেলায় যেখানে যেখানে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে যাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে নিয়োগের দাবিতে চিঠি দিচ্ছেন তাঁরা।
‘‘হাইকোর্ট বলেছে, শর্তসাপেক্ষে নিয়োগ চলতে পারে। সুপ্রিম কোর্টও সেই রায় বহাল রাখল। নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে, যে-নিয়োগ নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকে চলছে, সেই প্রক্রিয়া চলতে পারে। তা হলে আমাদের নিয়োগে বাধা কোথায়,’’ প্রশ্ন শান্তনু দে নামে এক চাকরিপ্রার্থীর।