সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের হাতে এক পাতা কাগজ। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশে কোথায় কত শূন্য পদ, তার হিসেব সেই কাগজে। সামনে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার। রাজ্যের জমা করা কাগজ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি কড়া প্রশ্ন ছুড়ছেন, ‘‘এ তো শূন্য পদের হিসেব। সেই পদ কবে, কী ভাবে পূরণ হবে, তার দিশা কোথায়? হোয়্যার ইজ দ্য রোডম্যাপ?’’
রাজ্যের অফিসার জবাব দিয়েছেন, ১৪ হাজার পদ পূরণ করা হচ্ছে। বাকি পদ পূরণ হতে চার বছর দরকার। প্রধান বিচারপতির সাফ কথা, চার বছর সময় নিলে চলবে না। খুব বেশি হলে তিন বছর। কবে, কী ভাবে সব শূন্য পদ পূরণ হবে, তার খতিয়ান দিতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যেই। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘তিন বছরে বর্তমান শূন্য পদ কী ভাবে পূরণ হবে, শুধু তা জানালে চলবে না। ওই সময়ে যে সব পদ অবসরের ফলে খালি হবে, তা পূরণ করার দিশাও দেখাতে হবে।’’
স্বরাষ্ট্র দফতরের স্বপনবাবু একটু বেশি সময় চেয়েছিলেন। যদি শুক্রবার পর্যন্ত সময় মেলে। তাঁর হয়ে রাজ্যের আইনজীবী অমল গঙ্গোপাধ্যায়ও অনুরোধ করেন। কিন্তু মানতে চাননি প্রধান বিচারপতি। সোমবারই ফের তাঁকে নবান্ন থেকে এসে দিল্লিতে হাজিরা দিতে হবে। আগামী সোমবার, ১ মে রাজ্যে সরকারি ছুটি। কিন্তু স্বপনবাবুর ছুটি থাকবে না। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনি আজ এত দূর চলে এলেন, কোনও রোডম্যাপ ছাড়াই?’’ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশে মোট পদ ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৬৪টি। তার মধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩২৫টি। পশ্চিমবঙ্গের মতো উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মতো যে আধ ডজন রাজ্যে পুলিশে শূন্যপদের সংখ্যা দেশে সবচেয়ে বেশি, সেখানে দ্রুত পদ পূরণের নির্দেশের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মনীশ কুমার। শীর্ষ আদালত শূন্যপদে নিয়োগের পথনির্দেশিকা-সহ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বা অন্তত যুগ্মসচিব পদমর্যাদার অফিসারদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
পশ্চিমবঙ্গের তরফে আজ জানানো হয়েছে, রাজ্যে ৩৪৭টি আইপিএএস পদের মধ্যে ৭৩টি পদ খালি। ইউপিএসসি তা পূরণ করবে। ডব্লিউবিপিএস-দের ৪৬৩টি পদের মধ্যে ৭৬টি খালি। পিএসসি তা পূরণ করবে। প্রায় ১১০০ জুনিয়র কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। পুরুষ কনস্টেবলের ৪২৯৮ পদে জুলাইয়ের মধ্যে নিয়োগ হবে। ৭২৭ জন সাব-ইন্সপেক্টর, ৪৪৩ জন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগে অর্থ দফতরের মঞ্জুরি মিলেছে। ৫ হাজার কনস্টেবল ও ২৭০০ মহিলা কনস্টেবল পদে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাকি পদ কবে, কী ভাবে পূরণ হবে, তার কোনও দিশা রাজ্য সরকার দেখাতে পারেনি।
কেন এই দুরবস্থা?
আদালতের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসার বলেছেন, বাজেট বরাদ্দ ছিল না। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, পদ অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ হবে। বাজেট বরাদ্দ অনুযায়ী নিয়োগ হবে কেন!