বলাগড়ে রাসের মেলায় বিগ্রহ। — নিজস্ব চিত্র।
মধ্যরাতে বিন্ধ্যবাসিনীর সঙ্গে মালাবাদল করে বিয়ে হয় শিবের। বাজে সানাই। তার আগে আইবুড়োভাত খান দেবাদিদেব। আর এই বিয়ে উপলক্ষেই বলাগড়ে আয়োজন করা হয় রাসমেলার। স্থানীয়দের দাবি, অতীতে প্রজাদের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতেই এই রাসমেলার আয়োজন করতেন জমিদার।
কথিত রয়েছে, ১৭০৭ সালে শ্রীপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সাধক-জমিদার রঘুনন্দন মিত্র মুস্তাফি নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো করেছিলেন। এখন বলাগড় থানার মধ্যে পড়ে শ্রীপুর। প্রজা বৎসল জমিদার রঘুনন্দন বুঝতে পারেন, চাইলেও প্রজারা তাঁর বাড়ির পুজোয় আসতে পারছেন না। বাড়ির মহিলারাও বাইরে বার হতে পারছেন না। ফলে প্রজাদের সঙ্গে ক্রমেই তাঁর দূরত্ব বাড়ছে। এই দূরত্ব ঘোঁচাতে তিনি জমিদার বাড়ি থেকে কিছু দূরে বিন্ধ্যবাসিনী মায়ের পুজো শুরু করেন।
কংসের কারাগারে দেবকীর অষ্টম গর্ভে জন্মেছিল কৃষ্ণ। বসুদেব তাকে গোকুলে রেখে সেখান থেকে নিয়ে আসেন যশোদার সদ্যোজাত কন্যাকে। সেই কন্যাকে তুলে আছাড় মারতে যায় কংস। সদ্যোজাত সেই কন্যা কংসের মৃত্যু নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে। সেই কন্যাই দেবী বিন্ধ্যবাসিনী। বিন্ধ্যাচল পর্বতে এখনও এই তিথি মেনে পুজো হয় দেবীর। সেই তিথিতেই শ্রীপুরে দেবী বিন্ধ্যবাসিনীর পুজোর প্রচলন করেন জমিদার রঘুনন্দন, যা আজও হয়ে চলেছে। ওই দিনই দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় শিবের।
সন্ধ্যা বেলায় বরযাত্রী নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খায় শিব। তার পর তাকে মুস্তাফি বাড়িতে রাখা হয়। রাত ৩টের সময় সেখান থেকে বিয়ের জন্য বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দিরের দিকে রওনা হয় শিব। সঙ্গে বরযাত্রী। যাত্রাপথে বাজে বাজনা। পোড়ানো হয় বাজি। এর পর মন্দিরে পৌঁছে নিয়ম করে শিবকে সাত পাক ঘোরানো হয়। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে মালাবদল দিয়ে শেষ হয় বিয়ে। আর এই বিয়েকে কেন্দ্র করে শ্রীপুর গ্রামে বসে বিরাট মেলা, চলে প্রায় অর্ধ মাস।
পুজো উপলক্ষে এখনও মহিষ, ছাগল, ভেড়া বলি হয়। লোকগান, তরজা এবং বাউল গানের আয়োজন করা হয়। পুজোর শেষ দিন মন্দিরের পাশের পুকুরে বাজি প্রদর্শনী হয়। শিবের বিয়ে প্রসঙ্গে মিত্র মুস্তাফি পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম তথা মুস্তফি এস্টেটের সম্পাদক তাপস মুস্তফি জানান, একটা সময় জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত, কিন্তু সেই পুজো দেখতে যাওয়ার অধিকার ছিল না গ্রামের মানুষদের। সে কারণেই শিবের বিয়ে উপলক্ষে রাসমেলা শুরু করেন জমিদার। জমিদারির পতন ঘটলেও রয়ে গিয়েছে পুরনো এই প্রথা।