সারদা-মামলায় সিবিআইয়ের তদন্ত ঠিকঠাক গতিতে এগোচ্ছে না মনে হলেই সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে। সর্বোচ্চ আদালত আজ এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।
১৬ মাস আগে সুপ্রিম কোর্টই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে সঁপেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যুরোকে তদন্তভার দেওয়ার আর্জি নিয়ে তখন যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে তাঁরাই ফের শীর্ষ আদালতে এসেছেন। তাঁদের অভিযোগ শুনে সুপ্রিম কোর্ট আজ বলেছে, ‘‘যে দিনই আমাদের মনে হবে তদন্তের গতি শ্লথ হয়ে এসেছে, আমরা হস্তক্ষেপ করব।’’ ব্যুরোকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বিচারপতিদের মন্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে অভিযোগ এলেও আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। নিশ্চিত করুন, এমন দিন যেন না-আসে।’’
সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই-তদন্ত চাওয়া সেই জনস্বার্থ-মামলায় বাদীপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি টিএস ঠাকুরের বেঞ্চে তিনি আজ প্রশ্ন তোলেন, এত দিন সিবিআই-তদন্তে হলটা কী? তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সিবিআইয়ের ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ তলব করতেও আদালতকে আর্জি জানান তাঁরা। অন্য দিকে ওড়িশায় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে মামলা করেছিলেন যিনি, সেই অলোক জেনাও সিবিআই-তদন্তের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে অভিযোগ করেন।
সিবিআইয়ের তরফে অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেঞ্চও তাদের কাছে ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ চায়নি। আদালতের ব্যাখ্যা: তদন্তের উপরে কোর্ট নজরদারি করছে না। তবে তদন্ত কতটা এগিয়েছে, কোন রাজ্যে কত মামলা সিবিআই হাতে নিয়েছে, কতগুলোয় চার্জশিট পেশ হয়েছে— এ সবের একটা রূপরেখা দরকার। ‘‘আমরা আপাতত তদন্তে নজরদারি করছি না। কিন্তু যদি দেখি কিছুই হচ্ছে না, তা হলে হস্তক্ষেপ করব।’’— বলেছেন বিচারপতি ঠাকুর।
সারদার ‘চাপ’ কাটাতে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যার সুবাদে সিবিআইয়ের তদন্তে ভাঁটা পড়েছে— কংগ্রেস-সিপিএমের মুখে এমন অভিযোগ অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। আজ সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ শোনার পরে মামলার অন্যতম আবেদনকারী তথা কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘‘বোঝা গেল, দিদি-মোদী আঁতাতে কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।’’ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজ্য সরকার ধামাচাপা দিতে চাইলেও প্রতারকদের শাস্তি ও প্রতারিতদের টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হবে।’’ পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়ে দিয়েছে, সারদা-সহ অবৈধ অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই-ই তদন্ত করবে। প্রসঙ্গত, লোকাভাবের কারণ দেখিয়ে সিবিআই পশ্চিমবঙ্গের সব সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে চাইছিল না। তাদের দাবি ছিল, সে ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশকে অফিসার দিয়ে সাহায্য করতে হবে। অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, রাজ্য পুলিশেও প্রচুর পদ খালি। সিবিআইয়ের যুক্তি মানলেও রাজ্য পুলিশে ‘লোকাভাবের’ যুক্তি সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু সন্দিহান। বিচারপতি ঠাকুর মনে করিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারই প্রথমে সিবিআই-তদন্তের বিরোধিতা করে আদালতে জানিয়েছিল, তারাই তদন্ত চালাতে সক্ষম। ‘‘এই লোকাভাব নিয়ে রাজ্য পুলিশ কী ভাবে সব মামলার তদন্ত করত?’’— প্রশ্ন তুলেছে সর্বোচ্চ আদালত।
এবং এ প্রসঙ্গেই সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের কাছে জানতে চায়, তাদের কত জন অফিসার প্রয়োজন?
সিবিআই বলেছে, রাজ্য সরকার ১০ জন এসপি, ১৫ জন এএসপি, ৩০ জন ডিএসপি ও ৮৫ জন ইন্সপেক্টরকে ডেপুটেশনে পাঠাক। রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়, তারা সাহায্য করতে রাজি। যদিও কত জনকে দেওয়া যাবে, তা বলা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও সিবিআইয়ের যুগ্ম-অধিকর্তা আলোচনা করে ব্যাপারটা ঠিক করুন। এ জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হচ্ছে।
সারদার মতো নানা লগ্নি সংস্থার হাতে প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার কী হবে, সুপ্রিম কোর্ট আজ সে প্রশ্নও তুলেছে। বস্তুত ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গড়া শ্যামল সেন কমিশন পাট গুটিয়ে ফেলেছে শুনে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে। কেন্দ্রকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বললেও আদালত সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দের কোনও কথা বলেনি। বরং প্রতারক সংস্থার সম্পত্তি নিলাম করে পাওয়া টাকা ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বাজেয়াপ্ত অর্থ প্রতারিতদের ফিরিয়ে যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখতে বলেছে।
++++++++++++++++++++
সেবি-র কোপে পৈলান গোষ্ঠী
কলকাতার পৈলান গোষ্ঠীর দুই সংস্থা পৈলান অ্যাগ্রো ইন্ডিয়া এবং পৈলান পার্ক ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং তাদের প্রাক্তন ও বর্তমান ডিরেক্টদের শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজার থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দিল সেবি। তাদের নতুন করে টাকা তুলতে, ওই সংক্রান্ত প্রস্তাবনাপত্র জমা দিতে বা সে ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দিতেও নিষেধ করেছে বাজার নিয়ন্ত্রক। সংস্থা দু’টির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বেআইনি ভাবে ঋণপত্র ছেড়ে ৯৮ কোটি টাকারও বেশি তুলেছে। সংস্থা দু’টির প্রাক্তন ডিরেক্টর অপূর্ব কুমার সাহা, মদন কল, শ্রীকান্ত জৈন, রাজেন্দ্র বাহাদুর ছাড়াও, নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে বর্তমান ডিরেক্টর শেখর চন্দ্র কোলে, বিপিন কুমার সিংহ, চন্দন চক্রবর্তী, অভিজিৎ চৌধুরী প্রমুখের উপর।