শুনানি পিছোনোয় জয়েন্ট অন্ধকারেই

সর্বোচ্চ আদালতের দিকে হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে ছিলেন বাংলার ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থী। কিন্তু রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট নিয়ে অন্ধকার কাটল না মঙ্গলবারেও। কারণ, এত দিনের ওই প্রবেশিকা পরীক্ষা এই বছরের জন্য জীবনদান পেতে পারে কি না, তার শুনানিই হল না সুপ্রিম কোর্টে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:৫৮
Share:

সর্বোচ্চ আদালতের দিকে হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে ছিলেন বাংলার ৮৫ হাজার পরীক্ষার্থী। কিন্তু রাজ্য মেডিক্যাল জয়েন্ট নিয়ে অন্ধকার কাটল না মঙ্গলবারেও। কারণ, এত দিনের ওই প্রবেশিকা পরীক্ষা এই বছরের জন্য জীবনদান পেতে পারে কি না, তার শুনানিই হল না সুপ্রিম কোর্টে।

Advertisement

অন্তত চলতি বছরের জন্য রাজ্যের নেওয়া মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা যাতে চালু থাকে, তার জন্য শীর্ষ আদালতে লিখিত আবেদন জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অন্য কয়েকটি রাজ্যের তরফে এমন আবেদন জমা পড়েছে আগেই। সর্বোচ্চ আদালত আশ্বাস দিয়েছিল, মঙ্গলবার তারা ওই আবেদন শুনবে। কিন্তু সেই শুনানি হল না। কাল, বৃহস্পতিবার শুনানির নতুন দিন ধার্য হয়েছে। ফলে ১৭ মে এ রাজ্যে নির্ধারিত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জয়েন্টের সঙ্গে মেডিক্যাল প্রবেশিকা হবে কি না, সেই সম্পর্কে পড়ুয়ারা এখনও অন্ধকারেই। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের তরফে যা করার তাঁরা করছেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কথা বলার এক্তিয়ার কারও নেই।

বিভিন্ন রাজ্য যে নিজেদের মতো করে মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়, গত ২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির জন্য নেওয়া প্রবেশিকা পরীক্ষাও। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য সারা দেশে মাত্র একটিই কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে। তার প্রথমটা ‘অল ইন্ডিয়া প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট’ বা এআইপিএমটি হয়ে গিয়েছে রবিবার। পরের পর্যায়ের প্রবেশিকা ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট’ বা এনইইটি হবে ২৪ জুলাই। যে-সব রাজ্যের নিজস্ব মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা রয়েছে, তাদের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট একেবারে শেষ মুহূর্তে ওই নির্দেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির পরীক্ষার্থীরা মহাসঙ্কটে পড়েছেন। কারণ, তাঁদের অধিকাংশই রাজ্যের নেওয়া মেডিক্যাল প্রবেশিকার উপরে বেশি ভরসা করে থাকেন।

Advertisement

সমস্যা আরও আছে। এনইইটি পরীক্ষার পাঠ্যক্রম এবং এই রাজ্যে জয়েন্টের পাঠ্যক্রম কিছুটা আলাদা। পশ্চিমবঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই জয়েন্টের প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। সে-ক্ষেত্রে হঠাৎ কেন্দ্রীয় প্রবেশিকায় বসতে হলে পরীক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রম নিয়েও সমস্যায় পড়তে পারেন বলে অনেকের আশঙ্কা। সব মিলিয়ে রাজ্যের ৮৫ হাজার মেডিক্যাল জয়েন্ট পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যতের সামনে এই মুহূর্তে একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে।

কেন্দ্রীয় প্রবেশিকার ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যার কথাও উঠছে। এই রাজ্যে জয়েন্টে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। দেশ জুড়ে একটিই প্রবেশিকা পরীক্ষা হলে ভাষা নিয়েও জটিলতার মুখে পড়তে পারেন এই রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা। বোর্ডের একাংশ বলছেন, যে-সব রাজ্যের নিজস্ব জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড রয়েছে, তাদের ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে সুপ্রিম কোর্ট অন্তত এক বছর সময় দিলে সব দিক রক্ষা পেত। অভিন্ন কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল জয়েন্ট আগামী বছর থেকে চালু করা যেতে পারত। তা হলে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের আচমকা এমন অনিশ্চয়তায় পড়তে হতো না। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবারের শুনানিতে তাঁরা এটাই সর্বোচ্চ আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা হোক না-হোক, তাঁদের দরকার আরও খানিকটা সময়।

এ রাজ্যের যে-সব ছাত্রছাত্রী রবিবার কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকার প্রথম দফার পরীক্ষায় বসেছিলেন, তাঁরা চান, তাঁদের সকলকেই ২৪ জুলাই দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা এনইইটি-তে বসার সুযোগ দেওয়া হোক। কারণ, রাজ্যের মেডিক্যাল প্রবেশিকার উপরেই তাঁরা বেশি মনোনিবেশ করেছিলেন। যাঁরা বিভিন্ন টিউটোরিয়াল হোমে পড়েছেন, তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্যও ছিল রাজ্যের মেডিক্যাল প্রবেশিকা। তাই রবিবারের কেন্দ্রীয় প্রবেশিকার জন্য তাঁরা তেমন ভাবে তৈরি হননি। এক পরীক্ষার্থীর কথায়, ‘‘এটা আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপার। রবিবার যা পরীক্ষা দিয়েছি, তাতে অনেকেই পাশ করতে পারব না। একটা বছর নষ্ট হবে। ২৪ জুলাইয়ের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলে আমাদের অনেকেরই বছর নষ্ট হওয়া আটকানো যাবে।’’

সেই বিনষ্টি থেকে বাঁচতে তাঁরা তাকিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement