শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদার। ফাইল চিত্র।
এক দিকে দিলীপ ঘোষ, অন্য দিকে শুভেন্দু অধিকারী। এত দিন বলা হত, রাজ্য বিজেপি এই দুই শিবিরে বিভক্ত। নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন। মঙ্গলবার দিনভর সুকান্তর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা, সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা বি এল সন্তোষের বৈঠক হয়। কলকাতায় ফেরার পরে শুক্রবারই তিনি শুভেন্দু ও বিজেপির পরিষদীয় দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিজেপি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চান, আরএসএস থেকে উঠে আসা বিজেপির রাজ্য নেতারা তৃণমূল থেকে আসা শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতাদের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে কাজ করুন।
ভোটের আগে তৃণমূল থেকে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ নেতাদের জন্য বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে খেসারত দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠলেও সুকান্ত আজ জানান, অন্য দলের নেতাদের জন্য বিজেপির দরজা বন্ধ হচ্ছে না। আগামী দিনেও তাঁরা অন্য দলের নেতাদের বিজেপিতে স্বাগত জানাবেন। এমনকি, যাঁরা নির্বাচনের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিলেও ফের তৃণমূলে ফিরেছেন বা যাঁরা বাবুল সুপ্রিয়ের মতো বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাও আবার বিজেপিতে ফিরে এলে ভাল হয় বলে সুকান্তর মত। তাঁর বক্তব্য, তিনি বাবুলের মতো সকলের সঙ্গেই কথা বলতে রাজি। অন্য দলের নেতাদের জন্য বিজেপির দরজা খোলা রাখার প্রশ্নে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই চাইব না, কেউ কায়েমি স্বার্থ নিয়ে বিজেপিতে আসুন। কিন্তু যাঁরা বিজেপিতে আসছেন, তাঁরা দলের মতাদর্শ, প্রধানমন্ত্রীর নীতিতে আকৃষ্ট হয়েই আসছেন বলে বিশ্বাস করতে হবে। এ বার তাঁরা ঠিক করবেন, রাজনীতি মতাদর্শের জন্য করবেন না পদের জন্য করবেন?’’
নতুন রাজ্য সভাপতি নিয়োগের পরে বিজেপির রাজ্য কমিটিতেও শীঘ্রই রদবদল হতে চলেছে। মঙ্গলবার দিনভর বি এল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠকে সুকান্তর সঙ্গে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীও হাজির ছিলেন। রাতে সুকান্ত নড্ডা ও অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। সুকান্ত অবশ্য কলকাতা ফেরার আগে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নতুন রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে তাঁর টিম তৈরি হয়, বিজেপির টিম তৈরি হয়। সেখানে নতুন মুখ আসবেন, পুরনো মুখও থাকবেন।’’ তবে রাজ্য সংগঠনের খোলনলচে বদলানোর প্রয়োজন নেই বলেই সুকান্তর দাবি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কিছু বদলের দরকার হলেও হতে পারে।’’
পশ্চিমবঙ্গে ভোটে হারের পরে বিজেপিতে যাওয়া অনেকেই যেমন তৃণমূলে ফিরেছেন, আবার বিজেপির সাংসদ-বিধায়করাও তৃণমূলে গিয়েছেন। এর জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত অন্য রাজ্যের নেতাদের দিকেও আঙুল উঠেছে। সুকান্তর অবশ্য দাবি, সাংসদ-বিধায়করা দল ছাড়লেও দলের সংগঠনে তেমন ক্ষতি হয়নি। কারণ, বিজেপির সংগঠন বুথ শক্তিকেন্দ্র, মণ্ডল, জেলা স্তরের সংগঠনের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা বিজেপির প্রাণকেন্দ্র নন।