মঙ্গলবার নিউ টাউনে প্রকাণ্ড ছ’তলা ভবনে ‘জৈব হাট’ শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
রাসায়নিক মুক্ত চাল, আটা, সর্ষের তেল, রকমারি মশলা থেকে মরসুমি শাক, ঝিঙে, আলু, বেগুন বা জৈব চাষের ফসল রুই, কাতলা, চিংড়ি, পার্শে…! কনকচুড়ের খই বা নানা ধরনের সুগন্ধী চাল। তালিকাটি বেশ লম্বা। 'সুফল বাংলা গ্রিন' নামে একটি ব্র্যান্ডের মোড়কে এতশত জৈব খাদ্যের বিপণনে মাঠে নামছে সুফল বাংলা।
মঙ্গলবার কলকাতার উপকণ্ঠে নিউ টাউনে প্রকাণ্ড ছ’তলা ভবনে ‘জৈব হাট’ শুরু হয়েছে। পুজোর পরে পুরোদমে এর প্রসার চলবে। রাজ্য জুড়ে সুফল বাংলার ৭৯টি স্থায়ী বিপণিতেও দ্রুত এ সব মিলবে। বেলগাছিয়ার একটি বিপণিতেও মিলেট এবং অন্য জৈব খাবার মিলবে।
“জৈব খাবার খাওয়ার অভ্যাসটা কোনও সৌখীন শহুরে প্রবণতা নয়। আরও বেশি লোকের জন্য ন্যায্য দামে স্বাস্থ্যকর খাবার পৌঁছে দেওয়াটাই লক্ষ্য”, বলছিলেন কৃষি বিপণনন দফতরের সুফল বাংলা মঞ্চের কর্ণধার গৌতম মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এখানে চাষিরা ২০ শতাংশের বেশি লাভ রাখতে পারবে না। তাতে সাধারণ উপভোক্তাদের জন্যও দামটা সহনীয় হবে। আশা করছি, দ্রুত দামটা সর্বত্র নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না দ্রুত প্রকল্পটি কার্যকর করতে উৎসাহী। সরকারি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে রাজ্যে ১০টি ব্লকে জৈব খাবারের প্রসারের চেষ্টা চলছে। ব্লকগুলিতে ৭০০-৮০০টি করে পরিবার এই কাজে যুক্ত। এক সরকারি কর্তা বলছেন, “লালগোলায় জৈব ভুট্টা উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। সুফল বাংলা গ্রিন-এর ভুট্টার কর্নফ্লেক্সও শিগগির পাওয়া যাবে। বাজারের কর্নফ্লেক্স ৩০০ টাকার হলে এখানে তা ২০০-২২০ টাকায় মিলবে। স্বাস্থ্য এবং সাশ্রয় দু’টোই দেখা হচ্ছে।”
কিন্তু জৈব হাটে যা মিলছে তা সত্যিই রাসায়নিক মুক্ত কি না, কী ভাবে যাচাই করা হচ্ছে? গৌতম বলছেন, “তেল, ঘি, মশলা পরীক্ষার বন্দোবস্ত থাকছে। তিন মাসের মধ্যে আনাজের নমুনাও পরীক্ষা করা যাবে।” সরকারি সূত্রের খবর, কম, বেশি ৩৪টি জৈব চাষ প্রকল্প বা জৈব খাদ্য খামারকে এই উদ্যোগটির শরিক করা হয়েছে। প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ‘সুস্থায়ী কৃষি পরিবার’ বলে একটি মঞ্চ গঠন করেছেন। ওই মঞ্চের সদস্য ভাঙড়ের টোনার এক খামার-কর্তা উদয়ভানু দাস বলছেন, “জৈব হাটের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহকারীরা সরকারের কাছে হলফনামা পেশ করে খাবারের গুণমানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।”
তবে জৈব হাটের আনাজের মধ্যে যা মরসুমি নয়, তা চট করে পাওয়া মুশকিল হবে। গৌতম বলছেন, “আমরা রাঁচীর জৈব ফুলকপি বা শিলংয়ের জৈব আদা এক মাসের মধ্যেই আনব। কিন্তু টমেটো গোছের আনাজ যখন বাংলায় চাষ হয় না, তখন ভিন রাজ্য থেকে আনতে চাই না! তাতে দাম বেশি পড়বে। গুণমানও ঠিক থাকবে না। টমেটোর বদলে মরসুমি আমড়া, তেঁতুল রান্নায় বরং আমরা উৎসাহ দিচ্ছি।”