ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবিতে হাবড়া-নৈহাটি সড়ক অবরোধ। রয়েছেন অশোকনগরের তৃণমূল নেতা সমীর দত্ত। ছবি: সুজিত দুয়ারি
গত ছ’বছর ধরে চলছে প্রকল্পের কাজ। কোনও সমস্যা হয়নি। স্থানীয় বিধায়ক, পুরসভা সকলেই বারবার সহযোগিতার কথা বলেছেন। ফলে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে প্রস্তাবিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প ঠিক ভাবেই এগোচ্ছিল। আচমকাই ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে সোমবার সেখানে শুরু হল বিক্ষোভ।
রাজনৈতিক পতাকা না থাকলেও বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা। এক দিন আগে, রবিবার স্থানীয় বিধায়ক, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও বলেছিলেন, জোর করে কারও জমি নেওয়া চলবে না।
দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রীয় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শীঘ্রই তেল, গ্যাস উত্তোলনের কাজ শুরু হবে অশোকনগরে। বর্তমান প্রকল্পটি রয়েছে ৪ একর জমির উপর। গত ছ’বছর ধরে নানা রকম পরীক্ষা চলছে। প্রকল্পের জন্য ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ১২ একর জমি চেয়েছে রাজ্যের কাছে। জমি দিতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপও করেছে।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন চাষিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু করলেন স্থানীয় কিছু মানুষ। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সমীর দত্ত। এ দিন বিকেলে প্রায় আধ ঘণ্টা বাইগাছি এলাকায় হাবড়া-নৈহাটি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক মানুষ। তাঁরাও প্রকল্পের কাজে সহযোগিতা করতে চান বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। তবে তাঁদের দাবি, ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আগে করতে হবে। সমীর বলেন, ‘‘প্রকল্প এলাকায় চাষিরা ৭০ বছর ধরে চাষবাস করে আসছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে ওএনজিসি জোর করে তাঁদের জমি দখল করে নিয়েছে। চাষিরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। ২ ডিসেম্বর তার শুনানিও আছে।’’ এত দিন পরে কেন বিক্ষোভ, তার অবশ্য কোনও জবাব মেলেনি সমীরবাবুর কাছ থেকে।
এই বিক্ষোভ নিয়ে পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘এ দিন আমাদের দলীয় কোনও কর্মসূচি ছিল না। কেউ যদি গিয়ে থাকেন, তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে গিয়েছেন।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রকল্প এলাকার জমি উদ্বাস্তু ও পুনর্বাসন দফতরের। আমরা সব দিক খতিয়ে ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে জমির নো-অবজেকশন শংসাপত্র দিয়েছি। ছ’বছর ধরে ওখানে কাজ চলছে। এত দিন পরে ক্ষতিপূরণের কথা মনে পড়ল?’’
সিপিএমের অশোকনগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়, যাতে প্রকল্পের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। তবে জমির ভোগ দখল যাঁরা করে আসছিলেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পান, সেটা আমরাও চাই। সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই মেটানো হোক।” অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) ইউনিস রিসিন বলেন, “ওখানে বেশিরভাগ জমিই উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের। ব্যক্তিগত মালিকানার জমি কিছু থাকলে নেওয়ার আগে নথি খতিয়ে
দেখে আগে অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া হবে।”