এসইউসি-র ব্রিগেডে যোগ দিতে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা সমর্থকদের জমায়েত হাওড়া স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে কলকাতায় একক ভাবে ব্রিগেড সমাবেশ করতে চলছে এসইউসি। যার জেরে শনিবার যানজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে শহরে। ইতিহাস বলছে, ব্রিগেড ময়দানে সমাবেশ হলেই মিছিলের কারণে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কলকাতা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, গণপরিবহণের নাগাল পেলে নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে। শনিবারও তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিত্যযাত্রীরা।
দলের প্রতিষ্ঠাতা নেতা শিবদাস ঘোষের জন্মশতবর্ষ পালনের জন্য এক বছর ধরে কর্মসূচি নিয়েছিল এসইউসি। সেই কর্মসূচির সমাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই ব্রিগেড সমাবেশ। শিবদাস স্মরণে ওই তারিখে প্রতি বছরই কলকাতায় এসইউসির কেন্দ্রীয় সমাবেশ হয়। এ বার তা হবে ব্রিগেড ময়দানে। এর আগে ১৯৮৮ সালে দলের পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে ব্রিগেডে সমাবেশ হয়েছিল। এত বছর পর যে হেতু এমন সমাবেশ, তাই অন্য রাজ্য থেকেও কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে এসইউসি। দলীয় সূত্রে খবর, ওড়িশা থেকে দু’টি ট্রেন, বিহার এবং কোচবিহার থেকে একটি করে ট্রেন রিজার্ভ করে কর্মী-সমর্থকেরা সমাবেশে আসবেন। এ ছাড়া, অন্যান্য ২৩টি রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বও ট্রেনের কামরা ভাড়া নিয়েছেন কলকাতায় আসার জন্য। এ রাজ্যের জেলাগুলি থেকে কয়েক হাজার বাস শহরে আসার কথা। মূলত দু’টি মিছিল আসবে ব্রিগেডে। একটি হাওড়া, অন্যটি শিয়ালদহ থেকে।
মূলত ব্রিগেডমুখী মিছিলের জন্যই যানজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই একের পর এক ছোট-বড় মিছিল আছড়ে পড়বে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ ধর্মতলাগামী রাস্তাগুলিতে। ফলে, অন্তত ঘণ্টা দেড়েকের শহরের অন্য সব অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র। থমকে যেতে পারে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড, থিয়েটার রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, ডি এল খান রোড, মেয়ো রোড-সহ উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার রাস্তা। একই অবস্থা হতে পারে ডায়মন্ড হারবার রোডেরও।
এসইউসি সূত্রে খবর, অন্য জেলা এবং রাজ্য থেকে কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই শহরে এসে পড়েছেন। শুক্রবার রাতে ঝাড়খণ্ডের বোকারো এবং ধানবাদ থেকে প্রচুর সমর্থক এসেছেন শহরে। তাঁদের নেতাজি ইনডোর, আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’, সল্টলেক স্টেডিয়াম ও কসবা গীতাঞ্জলিতে রাখা হয়েছে। শনিবার বাস, ম্যাটাডোরে করে তাঁদের সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হবে। এর জেরেও মৌলালি থেকে মল্লিকবাজার পর্যন্ত এজেসি বসু রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সেন্ট জর্জেস গেট (হেস্টিংস) এবং গোষ্ঠ পাল সরণিতে যানজট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে যাটজট মোকাবিলায় এখনও অবশ্য কোনও নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, সকাল থেকে রাস্তাঘাটে ভিড় এবং যানজটের কী পরিস্থিতি থাকে, তার উপর দাঁড়িয়েই সব পরিকল্পনা করা হবে। প্রয়োজনে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে। তবে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত গাড়ির চলাচলে কোনও বাধা নেই। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে কেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার উপর ভিত্তি করে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সময় সময় সমাজমাধ্যমেও রাস্তার অবস্থা জানিয়ে দেওয়া হবে।