প্রতীকী ছবি।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ পর্ব প্রায় শেষ। প্রযুক্তিগত দিকগুলি আরও কয়েক বার ঝালিয়ে নেওয়ার পরে সম্ভবত অগস্টের গোড়াতেই লকডাউনের মধ্যে পড়ুয়াদের জন্য নতুন আঙ্গিকে শিক্ষণ প্রচেষ্টা ‘বাংলার শিক্ষা দূরভাষে’ শুরু হতে চলেছে।
এই ব্যবস্থায় পড়ুয়ারা টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে শিক্ষকদের কাছে পড়া বুঝে নিতে পারবে। প্রথমে এই সুবিধা পাবে নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা। পরে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরাই তা পাবে। সারা রাজ্যে ১০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাকে এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে বলে শিক্ষা সূত্রের খবর।
লকডাউনের মধ্যে অনলাইনে পঠনপাঠন চললেও ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে বিস্তর অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামেগঞ্জে অনেক জায়গায় নেট সংযোগ এতই দুর্বল যে, অনলাইনে ক্লাস করা কার্যত অসম্ভব। অনলাইন-পাঠে স্মার্টফোন অপরিহার্য। কিন্তু কোনও কোনও পড়ুয়ার আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে, স্মার্টফোন কেনা সম্ভব নয়। তারা ওই ক্লাস করতে পারছে না। ফলে লকডাউনের পর থেকে চার মাসে পড়াশোনার সঙ্গে অনেক পড়ুয়ার সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
‘‘বাংলার শিক্ষা দূরভাষে এই সব সমস্যা নেই। স্মার্টফোনের দরকার নেই। পড়ুয়ার হাতে সস্তার একটা ফোন থাকলেই চলবে। এখানে ইন্টারনেট সংযোগেরও দরকার নেই। সরাসরি ফোন করেই শিক্ষকের কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে,’’ বলেন বিকাশ ভবনের এক কর্তা।
প্ৰশ্ন উঠছে, কোনও একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়ুয়ারা যখন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোনও পাঠ-সমস্যার সমাধান চেয়ে ফোন করবে, তখন সেই টোল ফ্রি নম্বরে লাইন পাওয়া যাবে তো? ধরা যাক, কোনও একটি নির্দিষ্ট সময়ে নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য বাংলার যে-কোনও সমস্যার উত্তর দিতে টোল ফ্রি নম্বর চালু হল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নবম শ্রেণির বহু পড়ুয়া যদি সেই নম্বরে ফোন করতে শুরু করে, সকলে লাইন পাবে কি? শিক্ষা দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, লাইন পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ওই নম্বরে এক বারে কমপক্ষে এক হাজার জন ফোন করে যাতে লাইন পায়, তেমনই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ে উত্তর দেওয়ার জন্য অন্তত এক হাজার শিক্ষককে তৈরি থাকতে বলা হবে। টোল ফ্রি লাইন থেকে যে-শিক্ষকের কাছে ফোন যাবে, তিনিই পড়ুয়ার সমস্যার সমাধান করে দেবেন। তাঁরা ঘরে বসেই ফোনের মাধ্যমে পঠনপাঠন চালাতে পারবেন।
ওই শিক্ষাকর্তা আশ্বাস দিলেও সূচনার আগেই এই দূরভাষ-শিক্ষা নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠছে। অনেকের প্রশ্ন, অঙ্কের মতো বিষয়ের কোনও সমস্যার কি ফোনে সমাধান সম্ভব? এক জন পড়ুয়া তার সমস্যার সুরাহার জন্য মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় পাবে। এই অল্প সময়ে পড়ুয়া যদি সব প্রশ্নের উত্তর না-পায়, তা হলে কি তাকে আবার এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে? এ ভাবে পড়াশোনার অগ্রগতি কতটা সম্ভব?
পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার অবশ্য এই প্রকল্প নিয়ে খুবই আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে-সব সম্ভাব্য সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোরও সমাধানের
রাস্তা আছে। পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই সব পরিকল্পনা করা হচ্ছে। রাজ্যের সব পড়ুয়া যাতে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে পড়াশোনার সুবিধা পায়, সেটা দেখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’’