Jhargram

সরকারি ভাবে পড়ে গিয়েছে গরমের ছুটি, তবু আসছেন হেডস্যর, ক্লাস হচ্ছে ঝাড়গ্রামের স্কুলে

পিছিয়ে পড়া গ্রামের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঘঝাঁপা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবতোষ ভৌমিকের। তাই পড়ুয়াদের কথা ভেবেই বাড়িও যাননি তিনি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৬:১৮
Share:

স্কুলের বারান্দাতেই পড়াচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

নাহ্‌, পাঠশালা বন্ধ হয়নি।

Advertisement

গরমের ছুটি চলছে। ছুটি এগিয়ে আনা আদৌ ঠিক কি না, তা নিয়ে চাপানউতোরও চলছে। আর এ সবের মধ্যেই জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে প্রত্যন্ত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলছে সকাল ও সন্ধে দু’বেলাই।

পিছিয়ে পড়া গ্রামের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঘঝাঁপা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবতোষ ভৌমিকের। তিনি জানাচ্ছেন, এলাকার বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাদের বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। করোনা কালের অভিজ্ঞতা বলছে, টানা স্কুল বন্ধ থাকায় শেখা পড়াও ভুলেছিল ছেলেমেয়েরা। তাই গরমের ছুটিতে পড়ুয়াদের কথা ভেবেই বাড়িও যাননি প্রধান শিক্ষক। রয়েছেন স্কুলের একটি ঘরেই। আর পড়ানো চলছে বারান্দায়। স্কুলের আরও দু’জন সহশিক্ষক অবশ্য ছুটিতে বাড়ি গিয়েছেন।

Advertisement

আগুইবনি পঞ্চায়েতের জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত গ্রাম বাঘঝাঁপা। গ্রামের ১২০টি পরিবারের প্রায় অর্ধেক লোধা এবং শবর পরিবার। দিনমজুরি অথবা বনজ সম্পদ বিক্রি করে দিন গুজরান হয় তাদের। আগে স্কুলছুট হয়ে যেত বেশিরভাগ পড়ুয়া। ২০১০ সালে এখানকার প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসেন ভবতোষ। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায়। স্কুলের একটি ঘরেই থাকেন তিনি। এমনিতেই প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে ও পরে লোধা এবং শবর পড়ুয়াদের আলাদা করে পড়ান ভবতোষ। তবে অন্যান্য বছর গরমের ছুটিতে তিনি বাড়ি যেতেন। এ বার ছুটি এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে থেকে গিয়েছেন তিনি। ভবতোষ বলছেন, ‘‘জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে জানিয়েই স্কুলে দু’বেলা কিছু পড়ুয়াকে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছি। নইলে ওরা সব ভুলে যাবে।’’

এই স্কুলের ৬৫ জন পড়ুয়ার ৪২ জন আদি জনজাতি লোধা-শবর গোষ্ঠীর। বাকিরাও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। এ রকমই ৪৪ জনকে রোজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং

সন্ধে ছ’টা থেকে ঘন্টা দু’য়েক পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। এমন উদ্যোগে খুশি ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও গ্রামবাসী। তৃতীয় শ্রেণির রাজদীপ ভুক্তা, লাবনী ভুক্তা, চতুর্থ শ্রেণির অনিশা ভুক্তা, পূজা মল্লিক, বিশ্বজিৎ ভুক্তারা বলছে, ‘‘হেডস্যর আমাদের রোজ পুরনো পড়া দেখিয়ে দেন। পড়া ধরেন। স্কুলে আসতে ভাল লাগে আমাদের।’’ অভিভাবক লক্ষ্মী ভুক্তা, সারথী টুডুর কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভেবে প্রধান শিক্ষক তো গরমের ছুটিতে বাড়িও যাননি।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান জয়দীপ হোতা মানছেন, ‘‘ওই প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’

ভবতোষ এবং দুই সহ-শিক্ষকের উদ্যোগে স্কুলটি ছবির মতো সাজানো। রয়েছে মরসুমি ফুলের বাগান, কিচেন গার্ডেন, ভেষজ উদ্যান। ২০১৯ সালে মিলেছে ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কার। পড়ুয়াদের পাশাপাশি এলাকাবাসীকে প্লাস্টিক-দূষণ নিয়ে সচেতন করে চলেছেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলে রক্তদান শিবির করে রক্তদানের গুরুত্বও বোঝাচ্ছেন তিনি। ঝাড়গ্রাম পূর্ব চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সুপ্রিয় বর্মণ বলছেন, ‘‘ওই প্রধান শিক্ষক স্কুলটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলেছেন। ছুটির মধ্যে তাঁর এই উদ্যোগ অন্য শিক্ষকদের কাছে শিক্ষণীয়।’’ কারণ, স্কুলে ছুটি। ছুটি নেননি মাস্টারমশাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement