প্রতীকী চিত্র।
অতিমারিতে স্কুলছুটের সমস্যা তো বেড়েছেই। কিন্তু যারা স্কুলছুট হয়নি, তাদেরও কেউ কেউ বাক্য গঠন করতে বেমালুম ভুলে গিয়েছে। অনেকে অঙ্ক করতে পারছে না আগের মতো। অনভ্যাসের ফলে কারও কারও হাতের লেখা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছে। বর্ণপরিচয় মনে নেই অনেকেরই। করোনাকালে পড়ুয়াদের ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা গৃহপাঠ দেখতে গিয়ে এমনটাই পর্যবেক্ষণ শিক্ষকদের।
অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার মতে, দেড় বছর ধরে স্কুলে না-যাওয়ায় পড়ুয়ারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে পুজোর পরে স্কুল খোলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শিক্ষা শিবির মনে করছে, শুধু স্কুল খুললেই তো চলবে না। পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের কী ভাবে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়, সেটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
দেড় বছর ধরে স্কুল না-হওয়ায় মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের থেকেও প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন লাভপুরের সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গ্রামাঞ্চলে গরিব পড়ুয়াদের অনেকেই দেড় বছরে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। দেখছি, অনেকে বর্ণপরিচয় পর্যন্ত ভুলে গিয়েছে। প্রয়োজনে পুরনো পড়া ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য ব্রিজ কোর্স করিয়ে নিতে হবে শিক্ষকদের।”
কলকাতার বেহালার ভোলানাথ হালদার স্মৃতি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী সেনগুপ্ত বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি, করোনাকালে অনেক বাচ্চার মা-বাবাদের মাসিক আয় কমে তিন থেকে চার হাজার টাকায় ঠেকেছে। ওই সব বাড়ির পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাস তো দূরের কথা, ১০০-১৫০ টাকা বেতন দিয়ে পাড়ার কোনও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই। তাদের অনেকেই পিছিয়ে পড়ছে ভীষণ ভাবে। ওই সব বাচ্চার জন্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতেই হবে।”
প্রতীচী ইন্ডিয়া ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, “পুজোর শেষে প্রাথমিক স্কুল খোলার পরে কোনও শ্রেণির সব পড়ুয়াকে এক ভাবে দেখলে চলবে না। শিক্ষকদের দেখতে হবে, কোন পড়ুয়া কী অবস্থায় আছে। যাদের পড়াশোনার মান খুব নেমে গিয়েছে বা পাঠ্যক্রম ভুলতে বসেছে, সেই সব পড়ুয়াকে সাধারণ পড়ুয়াদের থেকে আলাদা করে নিয়ে তাদের উপরে বিশেষ নজর দিতে হবে।” সেই সঙ্গে সাবিরের বক্তব্য, স্কুল খোলার পরেও যারা স্কুলে আসবে না, তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার কাজটা করতে হবে স্কুলকেই।
বাড়িতে অনেক খুদে পড়ুয়া পড়াশোনায় মন বসাতে পারছে না বলে জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির সর্বভারতীয় সভাপতি গৌতম সাহা। “স্কুল তো শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়। বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো থেকে শুরু করে শিক্ষকদের সান্নিধ্য— সব কিছুই মেলে সেখানে। এগুলো দীর্ঘ সময় ধরে না-পেয়ে খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে মানসিক অশান্তি ও উৎকণ্ঠা তৈরি হচ্ছে। তাই তারা বাড়িতে পড়াশোনায় মন বসাতে পারছে না। মানসিক উৎকণ্ঠা থেকেও পড়ুয়ারা পিছিয়ে পড়ছে,” বলেন গৌতমবাবু।
এই অবস্থায় পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক কর্তা।