মাওবাদী যোগের কথাই আচার্যকে শোনাল রাজ্য

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার রাতে পড়ুয়াদের ভিড়ে মাওবাদীরাও মিশে ছিল বলে ৪৮ ঘণ্টা পরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে জানাল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বার বার জানাচ্ছিলেন তাঁর প্রাণহানি হতে পারে। একই সঙ্গে পুলিশ কমিশনার এও জানান, সেদিন রাতে অস্ত্র-সহ বহিরাগতরা চত্বরে ঢুকেছিল। তবে সেই বহিরাগতরা যে ‘মাওবাদী’, সে কথা প্রকাশ্যে বলেননি সুরজিৎবাবু। বরং তিনি জানান, বহিরাগতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৯
Share:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার রাতে পড়ুয়াদের ভিড়ে মাওবাদীরাও মিশে ছিল বলে ৪৮ ঘণ্টা পরে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে জানাল রাজ্য সরকার।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বার বার জানাচ্ছিলেন তাঁর প্রাণহানি হতে পারে। একই সঙ্গে পুলিশ কমিশনার এও জানান, সেদিন রাতে অস্ত্র-সহ বহিরাগতরা চত্বরে ঢুকেছিল। তবে সেই বহিরাগতরা যে ‘মাওবাদী’, সে কথা প্রকাশ্যে বলেননি সুরজিৎবাবু। বরং তিনি জানান, বহিরাগতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

কিন্তু এ দিন বিকালে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদের বন্দ্যোপাধ্যায় আলাদা করে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে জানান, ওই বহিরাগতদের মধ্যে মিশে ছিল মাওবাদীরা। তাঁরা রাজ্যপালকে জানান, এক দিকে উপাচার্যের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ, অন্য দিকে বাইরে মাওবাদীদের উপস্থিতির কারণে পুলিশকে সক্রিয় হতেই হয়েছিল। এ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।

Advertisement

শিক্ষামহলের একাংশের মতে, ঘটনার পরে প্রকাশ্যে উপাচার্যের প্রাণনাশের আশঙ্কার কথা বলে ও রাজ্যপালকে মাওবাদী উপস্থিতির কথা জানিয়ে আসলে একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চাইল রাজ্য। তাঁদের মতে, গত দু’দিন ধরে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে যে ভাবে ধিক্কার শোনা গিয়েছে, তাতে আত্মরক্ষার জন্যই রাজ্য সরকার এই পথ বেছে নিয়েছে।

তবে রাজভবনের বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে কেউই মুখ খোলেননি। এ দিন সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের শেষে যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপাল বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে বলেছি।” তিনি কি পুলিশি তাণ্ডবের নিন্দা করেছেন? সরাসরি জবাব এড়িয়ে রাজ্যপাল বলেন, “আমি যা বলতে চাই, তা বলেছি। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।”

সে দিনের ঘটনায় মাওবাদী যোগের তত্ত্ব কোথা থেকে এল?

নবান্ন সূত্রের খবর, এই নিয়ে উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে উপাচার্য যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, সেখানেই মাওবাদী যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি জানান, দিন কয়েক ধরেই ছাত্র আন্দোলনকে মারমুখী করার প্রস্তুতি চলছিল। তাতে সক্রিয় ভূমিকা ছিল বহিরাগতদের। এদের মধ্যে ছিল মাওবাদীরাও। সে দিনের ঝামেলার মূলে তাদের ভূমিকা ছিল।

এ দিন রাজ্যপালকে প্রায় একই কথা জানান উপাচার্য। পরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবও সে দিন পুলিশের ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে মাওবাদী প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

রাজ্যপালের হাতে শিক্ষামন্ত্রী একটি ভিডিও সিডি তুলে দেন। রাজ্যের দাবি, আন্দোলনকারীরা যে মারমুখী ছিল, ওই সিডি-তে থাকা ছবিতেই তার প্রমাণ রয়েছে। অন্য দিকে, পুলিশ কমিশনার যে রিপোর্ট নবান্নে পাঠান, তার উপর ভিত্তি করেই স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যপালকে সে দিনের ঘটনার কথা জানান। তাঁদের দু’জনেরই বক্তব্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফেরানোটা জরুরি ছিল। সেই কারণেই পুলিশ ঢুকেছিল। সকলের বক্তব্য শোনার পরে রাজ্যপাল সে দিনের ঘটনায় তেমন কোনও অস্বাভাবিকতা পাননি বলে রাজভবন সূত্রের দাবি।


কেশরীনাথ ত্রিপাঠী


পার্থ চট্টোপাধ্যায়

রাজভবনের বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁকে সামগ্রিক পরিস্থিতি জানিয়েছি। কোন পরিস্থিতিতে পুলিশকে যেতে হয়েছিল, তা আচার্য বুঝেছেন বলেই মনে করি।” তিনি বলেন, “পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের পিছনে কারা ছিল তা দেখা হচ্ছে। বাইরের কিছু রাজনীতিক, যাদের নানা কারণে লোকে খুঁজে বেড়ায়, তাঁরাও এই ঘটনায় মদত দিয়েছে।” পার্থবাবুর দাবি, শ্লীলতাহানির যে অভিযোগ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু তা নিয়ে তদন্ত কমিটি যত বার রিপোর্ট দিতে চেয়েছে তত বারই গোলমাল হয়েছে। তাতে রির্পোটটাই বার বার চাপা পড়ে গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর প্রশ্ন, “ঘেরাওয়ের পরে এক পক্ষকে বেরোতে দিলেও অন্য পক্ষকে আটকে রাখা হল কেন?” ঘটনার পরের দিন মিছিলে অসীম চট্টোপাধ্যায় এবং অভিজ্ঞান কেন ছিলেন, সেই প্রশ্নও তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। বিরোধীরা অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী এ দিন অসীম চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিকে কটাক্ষ করলেও অতীতে এক বিধানসভা নির্বাচনে বেলেঘাটা কেন্দ্রের তৃণমূলের সমর্থনেই প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি।

যাদবপুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ করে এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন কয়েক জন শিক্ষক ও আইনজীবী। তাঁদের আইনজীবী ময়ূখ মৈত্র জানান, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করা যাচ্ছে না বলে আবেদনে জানিয়েছেন তাঁরা। আর্জিতে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব পড়ুয়া লেখাপড়া করতে চান, তাঁরা পড়াশোনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। আজ, শুক্রবার এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানান ময়ূখবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement