জ্যোতি বসু স্মারক বক্তৃতায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি
যে সময়ে যা মূল এবং আশু লক্ষ্য, তা মাথায় রেখেই বামপন্থীদের কৌশল ঠিক করতে হয়। দেশে আরএসএস-বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের শাসনের অবসান ঘটানোই এখন মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের তরফে অভিন্ন প্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিন্হাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত এই কারণেই। রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দেখিয়ে যাওয়া পথ স্মরণ করে এ ভাবেই দলের লক্ষ্য ও কৌশল ব্যাখ্যা করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
সাম্প্রদায়িকতা এবং বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য জাতীয় স্তরে সার্বিক ঐক্যই এখন তাঁদের লক্ষ্য বলে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন ইয়েচুরি। অতীতেও একই ভাবে সামনের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য দলীয় অবস্থান ঠিক করা হয়েছে বলে তাঁর মত। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও তার বাইরে নয়। তবে সাধারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্যের পরিস্থিতি বিচার করে যা করণীয়, ঠিক করা হবে রাজ্য নেতৃত্বের মতামত নিয়েই। বসুর ১০৯তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’ (জেবিসিএসএসআর)-এর আয়োজনে ‘স্বাধীনতা ৭৫’ শীর্ষক বক্তৃতার আয়োজন হয়েছিল। সেখানেই ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িকতাকে পরাস্ত করতে হবে। যারা যারা আগ্রহী, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সকলকেই সঙ্গে নিতে হবে। এটাই আমাদের দলের অবস্থান। এই লক্ষ্যে একসঙ্গে হতে গিয়ে কেউ কেন হলুদ জামা পরেছে বা লাল জামা গায়ে দিয়েছে, সেব নিয়ে নিজেদের মধ্যে ওজর-আপত্তি রাখলে চলবে না! যুক্ত ফ্রন্টের কৌশল কী ভাবে নিতে হয়, জ্যোতিবাবুই তা আমাদের দেখিয়ে গিয়েছেন।’’ এই সূত্রেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রসঙ্গও টেনেছেন তিনি।
ইতিহাস টেনে ইয়েচুরি এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দু’বার যুক্ত ফ্রন্ট সরকারে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অজয় মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করেছিলেন জ্যোতিবাবুরা। তখন কংগ্রেসকে সরকার থেকে দূরে রাখা লক্ষ্য ছিল এবং অজয়বাবুদের সঙ্গেই বেশির ভাগ বিধায়কের সমর্থন ছিল। একই ভাবে জরুরি অবস্থা ও ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইন্দিরারই সরকার থেকে বেরিয়ে আসা জগজীবন রামকে সমর্থন করেছিল সিপিএম-সহ বিরোধীরা। সেই সময়ে বিরোধী সমর্থনের জোরে কেন্দ্রে মোরারজি দেশাইয়ের সরকার হয়েছিল বলেই এ রাজ্যে ১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। পরে আবার রাজীব গান্ধীর মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহকে সমর্থন করেছিলেন জ্যোতিবাবুরা।
তৃণমূল থেকে আসা যশবন্তকে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন করা নিয়ে এ রাজ্যে বামেদের মধ্যে ক্ষোভ ও আপত্তি ছিল। অনুষ্ঠানের পরে এই প্রশ্নের জবাবে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘জাতীয় স্তরে দলের যা লক্ষ্য, সব রাজ্য কমিটিকেই তা মেনে চলতে হয়। রাজ্যের নির্বাচন হলে পরিস্থিতির নিরিখে রাজ্য দলের মত নিয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সে রকম নয়।’’ বিজেপি আগে জানালে দ্রৌপদী মুর্মুই রাষ্ট্রপতি পদে সর্বসম্মত প্রার্থী হতে পারতেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক মন্তব্য প্রসঙ্গে ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘বৈঠক উনিই ডেকেছিলেন। বাকি বিরোধীরা অংশগ্রহণ করেছিল। ওঁর দল থেকে আসা এক জনকেই সকলে মিলে সমর্থন করা হয়েছে। তার পরেও কেন এমন কথা বলেছেন, তার জবাব ওঁকেই দিতে হবে! বিরোধীরা তাঁর কাছেই জবাব চাইবে!’’
নিউটাউনে এ দিন বসুর নামাঙ্কিত কেন্দ্র জেবিসিএসএসআর-এর পরিকাঠামো নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে প্রাচীরের কাজ শুরু করে। বসুর জন্মদিন উপলক্ষে সবুজায়নের কর্মসূচি নিয়ে বিলি করা হয়েছে চারা গাছও।