নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
পরপর দুই নবজাতকের মৃত্যু। প্রশ্ন হল, কী ভাবে এবং কেন এটা হল? সদুত্তর মিলছে না। তবে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুতো-বিতর্ক ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্যের গোলকধাঁধা।
গত বৃহস্পতিবার এনআরএসের শিশু শল্য বিভাগে চিকিৎসাধীন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা লিভিয়া পারভিনের সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু হয়। লিভিয়ার স্বামী অভিযোগ করেন, নিম্ন মানের সুতো ছিঁড়ে সেলাইয়ের জায়গা খুলে যাচ্ছিল। সেই জন্য বার বার অস্ত্রোপচার করতে হয়। নবজাতক তার ধকল নিতে পারেনি। একই অভিযোগে শনিবার গাজোলের বাসিন্দা শিল্পী মুদির সন্তানেরও মৃত্যু হয়। এই প্রেক্ষিতে এনআরএস-কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে সুতোর নমুনা সংগ্রহ করেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলও।
এই ঘটনাপ্রবাহে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, দরপত্রে যে-বজ্র আঁটুনি রয়েছে, তা ফস্কা গেরোয় পরিণত হওয়া কী ভাবে সম্ভব? স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ব্ল্যাক ব্রেডেড সিল্ক সুতো ৩/০ এবং ব্ল্যাক ব্রেডেড সিল্ক সুতো ৪/০ মাপের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আতসকাচের তলায় থাকা ওই দু’ধরনের সুতোর ক্যাটালগ নম্বর হল জিএস ২৭০(এ) এবং জিএস ২৭০(বি)। সাড়ে পাঁচ বছর আগে যে-বেসরকারি সংস্থা সুতো সরবরাহের বরাত (দরপত্র নম্বর ১০৯৪) পেয়েছিল, তাদের বেশ কিছু শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছিল দরপত্রে। তার অন্যতম হল, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর (সিএমসি) অনুমোদিত সংস্থা থেকে সামগ্রী নিলেও তা রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহারের আগে স্বীকৃত গবেষণাগারে গুণমান পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রাপ্য অর্থ থেকে গবেষণাগারে পরীক্ষা বাবদ দু’শতাংশ টাকা কাটা যাবে বলে দরপত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, পরীক্ষিত সামগ্রী ব্যবহারের পরেও গুণমান যাচাইয়ের প্রয়োজন হচ্ছে কেন?
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, শিশু শল্য বিভাগে ব্যবহৃত সুতো এনআরএসের জেনারেল সার্জারি, সিটিভিএস এবং ইউরোলোজি বিভাগেও সরবরাহ করা হয়েছে। তা হলে শুধু শিশু শল্য বিভাগের সুতোর গুণমান বদলে গেল কী ভাবে? এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই সংস্থার সুতো তো এনআরএসের পাশাপাশি অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও সরবরাহ হয়েছে। তা হলে সেখানে সমস্যা হয়নি কেন?’’
এই গোলকধাঁধার উল্টো পিঠে রয়েছে সংক্রমণে মৃত্যুর আশঙ্কা। যেটা এনআরএসের চিকিৎসকদের একাংশও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, অস্ত্রোপচারের পরে শিশুগুলিকে যে-যত্নে রাখা উচিত, তা হচ্ছে না। রোগীর যা চাপ, সেই তুলনায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা কম। শয্যার অভাব তো রয়েছেই। অস্ত্রোপচারের পরে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয়নি, কে বলতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আপাতত ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে স্বাস্থ্য ভবন। এনআরএসের অভ্যন্তরীণ কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী রিপোর্টে নির্দিষ্ট করে মৃত্যুর কোনও কারণ জানানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সংগৃহীত সুতোর নমুনা হিমাচল প্রদেশের কসৌলির সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। সুতো জীবাণুমুক্ত ছিল কি না, তা জানার সঙ্গে সঙ্গে গুণমানের সব মাপকাঠিতে ওই সামগ্রীর অবস্থান কী, তা জানতে চেয়েছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল।