পুলিশের বাধায় আটকে গেল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কনভয়। রবিবার নন্দকুমারের শ্রীকৃষ্ণপুরে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’ বিধ্বস্ত এলাকায় দুর্গত মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা শুরু করে দিলেন বিরোধী নেতারা। বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীদের এই পরিদর্শনে যাওয়া নিয়ে বাধল সংঘাতও। কোথাও পুলিশের বিরুদ্ধে, কোথাও আবার শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল। শাসক দলের তরফে অবশ্য এ সবই বিরোধীদের ‘ছেলেমানুষি রাজনীতি’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তাদের পাল্টা মত, সরকার জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে কিন্তু বিরোধীরা খবরে ভেসে থাকতে চাইছে!
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যাওয়ার পথে শনিবার গড়িয়ায় আটকে দেওয়া হয়েছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গাড়ি। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুর্গত এলাকায় রবিবার গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। বারুইপুর, জয়নগরে স্থানীয় মানুষের বাইকে চেপে তাঁরা পৌঁছন ত্রাণ শিবিরে। সরাসরি তাঁদের আটকানো না হলেও দক্ষিণ শহরতলির নানা এলাকায় বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভকারী, বাম কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব ও বিরোধী দলের সমর্থক এবং মানবাধিকার সংগঠনের সরোজ বসুকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। সরোজকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। ‘আক্রান্ত’দের বাড়িতেও গিয়েছিলেন সুজনবাবুরা। হুগলির উত্তরপাড়ায় গিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু তৃণমূলের বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ।
বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, কোথাও তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার করতে বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে যাননি। তবু বাধা দিয়ে বা হামলা চালিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। শুধু বিরোধীরাই নয়, বসিরহাটে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও।
বিজেপির দিলীপবাবুর প্রশ্ন, ‘‘আমার সাংসদ এলাকা এগরায় আমি যেতে পারব না! জানি না এদের আইন কী! দুর্গত মানুষের কাছে গেলে, ত্রাণে সাহায্য করলে কীসের আইনশৃঙ্খলা অবনতি হবে?’’ সিপিএমের সুজনবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিপর্যয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণাত্মক মনোভাব নিতেই এলাকায় এলাকায় তৃণমূল মারমুখী হয়ে উঠেছে।’’ বিরোধীদের জবাব দিয়ে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘শুধু সংবাদে থাকতেই এই রকম পরিস্থিতিতে দিলীপবাবুরা পথে নেমেছেন। এই সময়ে মানুষের নিরাপত্তা প্রয়োজন, ত্রাণ প্রয়োজন। সে কাজ সরকার করছে। বিরোধীরা যা করছেন, সেটা ছেলেমানুষি রাজনীতি!’’
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে পুলিশ দিলীপবাবুর গাড়ি আটকায়। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হয়ে ‘দিলীপ ঘোষ গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন। জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয় মানুযের অবরোধ তোলার চেষ্টা করছিলাম। উনি (দিলীপ ঘোষ) ওই সময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে, উনি ওখান থেকে যেতে পারেননি।’’ পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা ডেবরার শ্রীরামপুরের কাছেও দিলীপবাবুর গাড়ি আটকায় প্রশাসন। বাধা পেয়ে খড়্গপুরের দিকে হাঁটতে শুরু করেন দিলীপবাবু। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “কলকাতার মতো রেড জোন থেকে যদি কেউ নিজের এলাকায় যান, তবে তাঁকে সেখানেই কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। উনি সেটা থাকবেন না! উনি গেলে ভিড় হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’’ তবে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বেশ কিছুটা হাঁটার পরে ফের দিলীপবাবুর গাড়ি ছেড়ে দেয় পুলিশ।