প্রতীকী ছবি।
কান টানলে মাথা আসে। কালিম্পং থেকে আইএসআই এজেন্ট সন্দেহে ধৃত পীর মহম্মদকে জেরা করে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর অফিসারদের ধারণা, তাঁরা সে ‘মাথা’র কথা জানতে পেরেছেন। তিনি এ রাজ্যের পাহাড়ের বাসিন্দা এক মৌলানা। অফিসারদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, দার্জিলিং, কালিম্পং পাহাড়ে ওই মৌলানাই আইএসআই-র অন্যতম এজেন্ট বা চর। তবে পীর ধরা পড়ার বেশ কিছু দিন আগে, মক্কায় হজে যাবেন দাবি করে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন তিনি।
রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘মৌলানার খোঁজ শুরু করেছে এসটিএফ। ওই মৌলানা মক্কায় গেলেও ভিসার মেয়াদ ফুরোলে ফিরতে হবে। বিমানবন্দরে সতর্কতা-বার্তা যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, মৌলানা মক্কায় গিয়ে না ফিরলে, কেন্দ্রীয় সরকারকে সমস্ত তথ্য জানানো হবে। ইতিমধ্যে কিছু তথ্য জানানো হয়েছে। মৌলানার মতো আরও কেউ রাজ্যের কোথাও রয়েছে কি না, তা দেখা শুরু হয়েছে বলে দাবি ওই গোয়েন্দা-কর্তার।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ধরা পড়েন পীর। তাঁকে জেরা করে গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ধারণা, একে ধর্মভীরু, তার উপরে মাথায় ঋণের বোঝা থাকায় ‘সফ্ট টার্গেট’ হিসাবে তাঁকে বাছেন মৌলানা। বছর দু’য়েক আগে, নেপালে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানেমৌলানার সঙ্গে আলাপ হয় পীরের। নেপাল থেকে ফিরে বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা ঋণ নেন পীর। কিন্তু করোনা-পর্বে নিজের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানের বিক্রি মার খাওয়ায় ঋণ শোধ দিতে সমস্যায় পড়েন তিনি।
গোয়েন্দাদের দাবি, পাহাড়ে মোবাইলের দোকান চালানো মৌলানা সে সময় পীরকে জানান, হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ফোন আসবে। সেগুলিতে মেলা নির্দেশ অনুযায়ী, ছোটখাটো কাজ করলে টাকা মিলবে। তেমনই এক নির্দেশ পেয়ে পীর পাহাড়ের একটি সেনা ছাউনির বাইরে থেকে তোলা ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাকিস্তানে পাঠান বলে অভিযোগ। সে ছবি তোলার পারিশ্রমিক নিতে তাঁকে দীপাবলির পরে নেপালে যেতে বলা হয়েছিল। আশ্বাস ছিল, পাকিস্তান থেকে লোক এসে তাঁকে নগদে মোটা টাকা দেবে। তবে তার আগেই তিনি ধরা পড়ে গেলেন।
পীর পাকিস্তানে চার-পাঁচ বার এবং মক্কায় দু’দফায় কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। জেরায় পীর এসটিএফকে জানিয়েছেন, ‘মক্কায় কাজ আছে’ বলে তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। সেখানে ফোন নম্বর ছিল। তাতে ফোন করার পরে, সেখান থেকে পাল্টা ফোনে মক্কায় সাফাইওয়ালার কাজের কথা বলা হয়। বেতন বলা হয়েছিল মাসে ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি। তবে সেই নম্বরটি এখন বন্ধ বলেই জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। ফলে, তাঁদের একাংশের অনুমান, পীরের আগ্রহ কতটা, তা পরখ করে দেখতে ওই ‘টোপ’ দেওয়া হতে পারে।
এসটিএফ সূত্রের দাবি, পীরের কাছে সরাসরি পাকিস্তান থেকে নির্দেশ আসতে শুরু করে চলতি বছরের গোড়ায়। ওই সময়ে মৌলানা হজে যাওয়ার কথা বলে পাহাড় ছাড়েন। তবে তিনি আদৌ মক্কায় গিয়েছেন, না অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়েছেন তা জানার চেষ্টা চলছে।