ফাইল চিত্র।
পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, যখন পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে তখন সেখান থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সরিয়ে নেওয়া উচিত হবে না। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ জারি থাকবে। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর বাহিনী প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যে পাঁচ কোম্পানি ইতিমধ্যেই পাহাড় থেকে নামানো হয়েছিল, তাও ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশের পর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা হওয়ারই ছিল। কারণ হাইকোর্টের নির্দেশ ওরাই অবমাননা করেছে।’’ এ দিন শিলিগুড়িতে বিনয় তামাঙ্গ বলেন,‘‘পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এরমধ্যে গোলাগুলি, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার।’’
গত জুন মাসে থেকে পাহাড়ে আন্দোলন শুরু হতেই জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। সে সময় কেন্দ্রের কাছে ২০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী চায় রাজ্য। মিলেছিল ১১ কোম্পানি। জুলাইয়ে পাহাড়ে আরও চার কোম্পানি বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই ১৫ কোম্পানি থেকেই ১০ কোম্পানি তুলে নিতে চেয়েছিল দিল্লি।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের অবকাশকালীন আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত ডিভিশন বেঞ্চে জানান, দিল্লির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য মামলা করতে চায়। এ দিন দুপুরের শুনানিতে এজি জানান, পাহাড় স্বাভাবিক হচ্ছে। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দিন কয়েক আগে বিমল গুরুঙ্গের বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এক পুলিশ অফিসার। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র তার বাহিনী সরাতে চাইছে। হাইকোর্টের নির্দেশে সেই বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। আদালতের অনুমতি না নিয়ে পাহাড় থেকে বাহিনী সরানো যায় না। এজি আরও জানান, রাজ্য কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে অনুরোধ করেছে, আরও দু’মাসের জন্য আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন রাখতে।
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী বিপুল কুন্দুলিয়া জানান, রাজ্যই বলেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। আধা সামরিক বাহিনীর মেয়াদ একাধিক বার বাড়ানো হয়েছে। এখন আর সম্ভব নয়। ওই আইনজীবী জানান, কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এ রাজ্য থেকে আধা সামরিক বাহিনী পাঠাতে হবে।
তা শুনে বিচারপতি বসাক কেন্দ্রের কৌঁসুলির উদ্দেশে মন্তব্য করেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের কথাই ঘোষণা হয়েছে জানি।’’ বিচারপতি টন্ডন মন্তব্য করেন, ‘‘দেশে পর্যাপ্ত বাহিনী নেই, এটা ঠিক। কিন্তু কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভার ভোটের জন্য আধা সামরিক বাহিনী সরানোর যুক্তি পুরোটা মানা যায় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতে আরও ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল।’’ বিচারপতি টন্ডন পর্যবেক্ষণ করেন, ‘‘প্রয়োজন ছিল বলেই ১৫ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন হয়েছিল। এখনই বাহিনী প্রত্যাহারের যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দরকার।’’
ডিভিশন বেঞ্চ এর পরে এজি-র কাছে জানতে চায়, রাজ্য কি চাইছে।। এজি জানান, আদালত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের উপর আপাতত স্থগিতাদেশ জারি করুক। ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে, কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানো হবে তা ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হলফনামা দাখিল করে জানাতে হবে। রাজ্যও ২৬ অক্টোবরের মধ্যে পাল্টা হলফনামা দেবে।