প্রতীকী চিত্র
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চলতি বছরের শেষাশেষি করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে এবং তাতে বেশি মাত্রায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা শিশুদের। তৃতীয় ঢেউ যে শিশুস্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে, অনেক আগে থেকেই এই আশঙ্কার কথা জানানোর পাশাপাশি তার মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের জন্য হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্র। তার সঙ্গে নির্দিষ্ট আনুপাতিক হারে নিজেদের ভাগের টাকা যোগ করে লড়াইয়ের সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে রাজ্য। নবান্নের খবর, প্রস্তুতি হিসেবে শিশু-চিকিৎসায় যে-সব যন্ত্রপাতি ও পরিকাঠামো প্রয়োজন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তা জোগাড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরকে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিড (সিসিইউ), হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), নবজাতকদের জন্য নিওনেটাল ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু) এবং শিশুদের জন্য পেডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের (পিকু) জন্য সব ধরনের যন্ত্র কেনার বরাত দেওয়া হয়েছে। শিশু চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াও প্রায় আড়াই হাজার আইসিইউ, ট্রান্সপোর্ট এবং বাইপাপ ভেন্টিলেটর কেনা হচ্ছে। প্রশাসনিক কর্তারা জানান, শিশুদের জন্য ১৩০০ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১৮০০ বিশেষ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শিশুদের জন্য আরও ১১০০ বিশেষ শয্যা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।
কোভিড খাতে রাজ্য অর্থ বরাদ্দ করেছে আগেই। সেই সঙ্গেই যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার জন্য কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাও নেওয়া হচ্ছে। চলতি আর্থিক বছরে অতিমারির জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরির জন্য সারা দেশে ২৩,১২৩ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। বাংলার জন্য ধার্য হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। শিশু চিকিৎসার ইউনিট গড়ে তোলা, বর্ধিত আইসিইউ শয্যার ২০% শিশুদের জন্য বরাদ্দ রাখা, অক্সিজেন সরবরাহের পরিকাঠামো তৈরি, ওষুধ-যন্ত্রাংশ ইত্যাদি খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা যাবে। এক কর্তা জানান, এই প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী টাকার একাংশ দেবে কেন্দ্র, বাকি দিতে হবে রাজ্যকে। কেন্দ্র ১০০০ কোটি টাকা দিলে রাজ্যকে দিতে হবে ৪০০ কোটি।
এক কর্তা বলেন, “কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে দরপত্র ডাকা হয়েছে। সরকারের ‘জেম’ বা গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে কেনা হচ্ছে কিছু সরঞ্জাম। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেনার পরে যন্ত্রপাতি সক্রিয় করতে কিছুটা সময় লাগে। দ্রুত সেই কাজ শেষ করতে চাইছে সরকার।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যত বেশি টিকাকরণ হবে, তৃতীয় তরঙ্গের মোকাবিলা তত সহজ হবে। রাজ্যে টিকার জোগান বাড়ছে। তাই নিবিড় টিকাকরণের নির্দেশ নিয়মিতই সব জেলাকে দিয়ে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। তৃতীয় তরঙ্গ শিশুস্বাস্থ্যের উপরে প্রভাব ফেলতে পারে, এই আশঙ্কায় এখনও লোকাল ট্রেন চলাচলে অনুমতি দেয়নি রাজ্য। প্রশাসনের অন্দরমহলের বক্তব্য, ৬-১৭ বছর বয়সিদের টিকাকরণ শুরু হলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আরও সহজ হবে।