নিজস্ব চিত্র।
এ যে নিছকই ছেলের হাতের মোয়া নয় তা ইতিমধ্যেই খাতায়-কলমে মেনে নিয়েছে গোটা দেশ। ২০১৫ সালেই রাজ্য সরকারের সহায়তায় কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রকের কাছ থেকে জিআই বা জিয়োগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন তকমা আদায় করে নেয় ‘জয়নগরের মোয়া’! কিন্তু খাস জয়নগর থেকে শুরু করে কলকাতায় জাল জয়নগরের মোয়া বিক্রি এখনও ঠেকানো যায়নি। এই সমস্যা রুখতেই এ বছর যত দূর সম্ভব বেশি পরিমাণে গোটা রাজ্য তথা দেশে আসল জয়নগরের মোয়া পৌঁছে দিতে কোমর বেঁধে নামছে কুলীনতম মোয়া নির্মাতাদের জোট। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরও তাঁদের পাশে।
জিআই তকমাপ্রাপ্ত জয়নগরের মোয়া এ বছর থেকে ‘জয়নগর মোয়া নির্মাণকারী সোসাইটি’র ওয়েবসাইটের (জয়নগরমোয়া.ওআরজি) মাধ্যমে সারা দেশে বিপণনের দরজা খুলছে। গত বছর কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগে চেন্নাইয়ে প্রবাসী এক বঙ্গসন্তানের বিপণিতে দেদার বিকিয়েছে জয়নগরের মোয়া। কিন্তু সেরা মোয়ার স্বাদমাহাত্ম্য সবাইকে চেনাতে এখনও বিরাট বাধা হল মোয়ার আয়ুর সীমাবদ্ধতা। জয়নগর মোয়া নির্মাণকারী সোসাইটির ৪৬ জন সদস্য তথা জিআই-তকমাপ্রাপ্ত মোয়ার ৪৬ জন নির্মাতাই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন। সোসাইটির সম্পাদক তথা জয়নগর ১ ব্লকের উত্তর কালিকাপুরের একটি বিপণির কর্তা অশোক কয়ালের কথায়, ‘‘সবে শীতের আভাস মিললেও বাজারে এখনও খাঁটি কনকচুড় ধানের খইয়ের চিহ্ন নেই। জিরেনকাটের নলেন গুড়ের সময় হয়নি। কিন্তু জয়নগরের মোয়া বলে কিছু বস্তু ইতিমধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তাতে জিআই-তকমা নেই। আসল জয়নগরের মোয়ার স্বাদ চেনাতে না-পারলে ভুয়ো মোয়া বিক্রি বন্ধ হবে না।’’ জয়নগরের মোয়ার অন্যতম আদি দোকান স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে শ্রীকৃষ্ণর কর্ত্রী পিয়ালি ঘোষ মাইতিরও এক সুর। ‘‘আসল কনকচুড় খইয়ের মোয়া আসতে এক সপ্তাহ বাকি!’’
অশোকবাবু জানাচ্ছেন, ওয়েবসাইটে মোয়া-নির্মাতারা মিলে দায়িত্ব ভাগ করে এ বার ‘দুয়ারে মোয়া’ ধাঁচে বিপণনে তৈরি। সেই সঙ্গে বিশ্ববাংলার বিভিন্ন বিপণি, প্রাণিসম্পদ দফতরের সুন্দরিনী সমবায় এবং কয়েকটি সমবায়িকার মাধ্যমেও আসল জয়নগরের মোয়া বিক্রি হবে। কিন্তু অন্য রাজ্যে তাজা মোয়া কী ভাবে পাঠানো হবে? অশোকবাবু বলছেন, এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ভিন্ রাজ্যের মোয়া বিশেষ কার্টনে পাঁচ দিন তাজা দেখা যাচ্ছে। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদদের সাহায্যে স্বাস্থ্যসম্মত প্লাস্টিকমুক্ত প্যাকেজিং করে মোয়া কী ভাবে আরও বেশি দিন তাজা রাখা যায়, তার চেষ্টা চলছে।