কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার রায়।—ফাইল চিত্র।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাক্তন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের নাম চূড়ান্ত করল রাজ্য। সম্প্রতি পেগাসাস আড়ি পাতা-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের নিযুক্ত বিচারবিভাগীয় কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই তদন্ত এখন স্থগিত রয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হিসেবে শিবকান্ত প্রসাদের নামও চূড়ান্ত হয়েছে। তারই পাশাপাশি রাজ্যের লোকায়ুক্ত পদে প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়কেই পুনর্নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এই নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়া রাজ্যপালের অনুমোদন সাপেক্ষ। সম্প্রতি একাধিক বিষয়ে নবান্ন ও রাজভবনের টানাপড়েন যে ভাবে চরমে পৌঁছেছে, তার প্রেক্ষিতে এই নিয়োগ ঘিরেও নতুন টানাপড়েন বাধবে কি না, সেই জল্পনা দানা বাঁধছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে।
বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে সোমবার স্পিকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকে এই নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে থেকে সম্ভাব্য নাম পাঠানোর অনুরোধ করা সত্ত্বেও তা না পাঠানোয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই কমিটির বৈঠকে ছিলেন না। তিনি সরাসরি রাজ্যপালের কাছেই তাঁর প্রস্তাব পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যপালের আপত্তিতে মানবাধিকার-প্রধান বা লোকায়ুক্তের নিয়োগও আটকে থাকতে পারে কি না, সেই প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘আমার মন্তব্য করার কিছু নেই। এটা সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা। আমি আমার কাজ করেছি। এ বার উনি (রাজ্যপাল) নিজের কাজ করুন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে নিয়ম, আমরা সেটাই মেনে চলি।’’
স্পিকার বিমানবাবুরও মত, কমিটি যে নাম চূড়ান্ত করে পাঠায়, তাতে রাজ্যপালের সম্মতি জানানোই নিয়ম। কমিটির বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর অনুপস্থিতির কড়া সমালোচনাও শোনা গিয়েছে স্পিকারের মুখে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কখনও দেখিনি বিরোধী দলনেতা এই ভাবে বারবার কমিটির বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেছেন। অতীতে সূর্যকান্ত মিশ্র, আব্দুল মান্নান উভয়েই উপস্থিত থেকেছেন। সূর্যবাবু অন্য নামও দিয়েছিলেন। এ বার অন্য কোনও নাম আসেনি। বিরোধী দলনেতা বোধহয় রাজ্যপালের কাছে গিয়েছেন!’’
পরিষদীয় সূত্রের খবর, গত ২২ ডিসেম্বর মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে মানবাধিকার কমিশন ও লোকায়ুক্তের জন্য সম্ভাব্য নামের প্যানেল জানতে চেয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু সরকার তা না জানানোয় বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কথা জানান তিনি। স্পিকার যদিও জানিয়েছেন, তিনি বিরোধী দলনেতার কাছ থেকে কোনও চিঠি পাননি। আর শুভেন্দু জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার তাঁকে সম্ভাব্য নাম পাঠায়নি, তার পরে আলোচনার কোনও অর্থ নেই। জ্বর থাকায় পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
স্পিকারের সমালোচনার প্রেক্ষিতে এ দিন শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘ভাল লাগছে, আমি কোথায় যাচ্ছি, না যাচ্ছি, সেই খবর মাননীয় স্পিকার রাখছেন! তিনি বলেছেন, এমন ঘটনা কখনও দেখেননি। সরকারি দলের কাউকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান পদে বসানোও তো আগে দেখা যায়নি। তা-ও আবার এমন এক জন, যাঁর সম্পর্কে পরিষদীয় মন্ত্রী বলছেন মানসিক ভারসাম্যহীন। অর্থাৎ মানসিক ভারসাম্য যিনি হারিয়েছেন, তাঁকে সরকারি হিসেব পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে!’’ বিরোধী দলনেতার প্রতি সরকারি উপ-মুখ্য সচেতক তাপস রায়ের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই বা অন্য সংস্থার প্রধান নিয়োগের বৈঠকের আগে সম্ভাব্য নাম বিরোধীদের জানিয়েছে কি? নিজেরা করলে যেটা ঠিক থাকে, অন্য কোথাও হলে সেটাই ভুল হয় কোন যুক্তিতে? সংসদীয় গণতন্ত্রে এমন আচরণ চলে না।’’