রোগটা খাস আরোগ্য নিকেতনের। মাঝেমধ্যে কোমর বেঁধে নিরাময়ের চেষ্টা চালানোর পরে ব্যাধিটা সাময়িক ভাবে আড়ালে চলে যেত। কিন্তু সেটা যে সারেনি, কলকাতার তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরেও ঠাঁই না-মেলায় শান্তিপুরের বৃদ্ধের মৃত্যু, শ্বাসনালিতে আটকানো কৌটো বার করার চেষ্টা না-করেই অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ার পরে শিশুর মৃত্যুর সাম্প্রতিক ঘটনাই সেটা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সেই ব্যাধিটার নাম ‘রেফার’। রোগী হাসপাতালে এলে পত্রপাঠ অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া। চিকিৎসা ক্ষেত্রের সেই মারাত্মক রোগের উপশমে এ বার কড়া পদক্ষেপ করছে স্বাস্থ্য দফতর।
অহেতুক রেফার বন্ধ করার জন্য আবার সব সরকারি হাসপাতালকে সতর্ক করে দিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, কোনও রোগীকে উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করার আগে অন্তত দুই সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশ নিতে হবে। রেফার করার আগে প্রাথমিক ভাবে স্থিতিশীল করতে হবে রোগীকে। সর্বোপরি তাঁকে যে-হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে শয্যা নিশ্চিত করে তবেই রেফার করতে হবে।
অকারণে ‘রেফার’ বন্ধ করার জন্য আগেও নিয়মবিধি চালু করা হয়েছিল। দিন কয়েক সেই নিয়ম মেনে চলা হলেও প্রতি বারেই দেখা যায়, রোগটা খুব দ্রুত স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। সাম্প্রতিক কালে যার মাসুল দিতে হয়েছে নিউ টাউনের আট মাসের শিশু থেকে শুরু করে শান্তিপুরের ৮০ বছরের বৃদ্ধকে। প্রতিদিন বহু রোগীকে ঘুরতে হচ্ছে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। কোথাও শুনতে হচ্ছে, শয্যা নেই। কোথাও আবার বলা হচ্ছে, চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর শুশ্রূষার পরিকাঠামো নেই সেখানে।
প্রশ্ন উঠছে, নতুন ভাবে যে-সব নিয়মের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো তো আগেও চালু করা হয়েছিল। সেই নিয়মবিধি যথাযথ ভাবে রূপায়ণ করা হয়নি কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, রোগীকে রেফার করতে হলে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নতুন পদক্ষেপ। তাঁর মতে, এর ফলে রোগীকে অন্যত্র পাঠানোর বিষয়টি একটা নির্দিষ্ট নজরদারির মধ্যে থাকবে। তাতে রেফারের প্রবণতাও কমবে। এ ছাড়াও এ বার থেকে প্রতিটি বিভাগের চিকিৎসকদের ডিউটি রস্টার তৈরি করতে হবে অনলাইনে। সেই অনুযায়ী বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের নামের তালিকা নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে রাখতে হবে। অজয়বাবু বলেন, “সব স্তরের হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার মান আরও
উন্নত করা এবং সমস্ত বিষয়ে নজরে রাখার জন্য জেলা ও রাজ্য স্তরে পর্যবেক্ষকদল তৈরি করা হচ্ছে।” কিছু চিকিৎসক ঠিকমতো ডিউটি করেন না। তাঁদের ফাঁকিবাজি রোখার বন্দোবস্ত হচ্ছে। সব সরকারি চিকিৎসককে সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা ডিউটি করতেই হবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।