—ফাইল চিত্র।
ভোট এবং ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিল রাজ্য সরকার। কোচবিহারের শীতলখুচিতে ভোটের সময় সিআইএসএফ-এর গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে আগেই পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে ভোট পর্বে বাকি ৩৮ জন নিহতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তবে এর মধ্যেই তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন মহল। যদিও তথ্য-সহ রাজ্যের দাবি, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তৎপরতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভোট ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন হিংসার ঘটনায় ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, কোচবিহার, বারুইপুর পুলিশ জেলা, দুই মেদিনীপুর, বারাসত ও বসিরহাট পুলিশ জেলা, হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলা, রানাঘাট-ডায়মন্ড হারবার-মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা, পূর্ব বর্ধমান, আলিপুরদুয়ার এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় ৩৮ জন প্রাণ হারান। সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির কাছে ক্ষতিপূরণের অর্থ পৌঁছনোর ব্যবস্থা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, কোচবিহারের চারটি পরিবারকে পাঁচ লক্ষ করে ২০ লক্ষ এবং বাকি ৩৮টি পরিবারের জন্য ৭৬ লক্ষ, মোট ৯৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার। সেই নির্দেশ মেনেই এ কাজ হচ্ছে।”
প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, ভোট-পরবর্তী হিংসার ১০৬টি ঘটনায় ২২ জন খুন হয়েছেন, আহতের সংখ্যা ১০৫। গ্রেফতার করা হয়েছে দেড় শতাধিক দুষ্কৃতীকে। এই সব ঘটনায় তৃণমূল, বিজেপি এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সবিস্তার তথ্য অনুযায়ী, গত ২ এবং ৩ মে নির্বাচন কমিশনের বিধি কার্যকর থাকার মধ্যেই ১৫টি হিংসার ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ৪৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়াও অন্যান্য ৪০টি হিংসার ঘটনায় ৭৩ জন আহত হয়েছেন। এই সব অপরাধে ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৪ মে পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটে। তাতে ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ৩১টি অন্য হিংসার ঘটনায় ২৮ জন আহত হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৫ মে ছ’টি হিংসার ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি হয়নি। পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সব ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। ৬ মে চারটি হিংসার ঘটনা ঘটে। ৭ মে তিনটি ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি হয়নি। ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৮ মে একজন খুন হয়েছিলেন, গ্রেফতার হয়েছেন ১২ জন। ওই দিনই আরেকটি ঘটনায় চার জন আহত হন এবং ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৯ মে হিংসার কোনও ঘটনা নথিবদ্ধ হয়নি।
প্রশাসনির সূত্রের বক্তব্য, বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে কমিশনের বিধি কার্যকর থাকার সময়। সেই সময় প্রশাসন কার্যত কমিশনের অধীনে ছিল। ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী শপথগ্রহণের পরে রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) এবং পুলিশের একাধিক পদে রদবদল করা হয়। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কড়া অবস্থানের বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকেই সক্রিয় ভাবে হিংসা নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়েছে রাজ্য।
ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের মন্তব্য, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে পুর্নবাসন রাজ্যকেই দিতে হবে। এ দিন মামলাকারী প্রিয়াঙ্কা তিবরেওয়াল অভিযোগ করেন, শুধু এন্টালি এলাকায় ১২৫ জন ঘর ছাড়া। তবে ঘর ছাড়াদের পুলিশ কী ভাবে বাড়ি পোঁছে দেবে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ দিন অ্যাডভোকেট জেনারেলের (এজি) কাছে জানতে চান, মানবাধিকার কমিশন-সহ একাধিক কমিশন বহু অভিযোগ জানিয়েছিল ডিজির কাছে। তার সংখ্যা কত? কোনও ই-মেল কি রাজ্য তৈরি করেছে যেখানে সরাসরি অভিযোগ জানানো যাবে? আগামী মঙ্গলবার মামলার শুনানি হবে। সেই দিন এই সংক্রান্ত জবাব দেবে রাজ্য।