দাড়িভিটকাণ্ডে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দাড়িভিটে গুলিতে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার রাজ্যের আবেদন মেনে মামলা করার অনুমতি দিল আদালত। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, আগামী সপ্তাহে রাজ্যের আবেদনের শুনানি হতে পারে।
গত ১৫ মার্চ বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে এই মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই মামলাতেই অতীতে বিচারপতি মান্থা তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) হাতে তুলে দেন। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরকারকে। অভিযোগ, ১০ মাস কেটে গেলেও আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। সেই অভিযোগ তুলেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মৃতের আত্মীয় নীলকমল সরকার। গত শুক্রবারের শুনানিতে মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী পার্থ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি। কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। এমনকি, এনআইএ-এর হাতে তদন্তের নথিও তুলে দেয়নি সিআইডি।’’
কেন আদালতের নির্দেশ মানা হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি মান্থা। সেই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি সিআইডির বিরুদ্ধে রুল জারিও করেছিলেন তিনি। বিচারপতি তাঁর নির্দেশে বলেছিলেন, আগামী ৫ এপ্রিল রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং এডিজি সিআইডিকে আদালতে হাজিরা দিয়ে জানাতে হবে কেন আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। বিচারপতি মান্থার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এ বার প্রধান বিচারপতির ডিভিশনে মামলা দায়ের করল রাজ্য সরকার।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাই স্কুল। অবরোধ, লাঠিচার্জ, ইট-পাথর ছোড়া থেকে শুরু করে বোমা-গুলিও চলে বলে অভিযোগ। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণ নামে দুই প্রাক্তন ছাত্রের। এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবিতে তাঁদের পরিবার এবং এলাকাবাসীর একাংশের আন্দোলনে প্রায় দু’মাস ধরে বন্ধ থাকে দাড়িভিট স্কুল।
পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। যদিও পুলিশ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে। কলকাতা হাই কোর্ট প্রথমে এই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে গত বছর ১০ মে সেই মামলাতেই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এনআইএ তদন্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দিতেও বলেছিলেন বিচারপতি।