KLO

KLO: জীবনকে পেতে কি ‘ডাক’ প্রাক্তনদের

জীবনের সঙ্গে ‘সরকার নিয়ন্ত্রিত’ সেই আলোচনা প্রক্রিয়ায় এখনও পর্যন্ত অংশ নিতে চাননি ওই প্রাক্তন কেএলও-রা।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী, রাজু সাহা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৯
Share:

গোপন ডেরা থেকে জীবন সিংহের ভিডিয়োবার্তা। ফাইল চিত্র।

কেএলও বা কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান জীবন সিংহের কাছে পৌঁছতে কি শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের সাহায্য চাওয়া হচ্ছে? একটি বিশেষ সূত্রে তেমনই দাবি করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে প্রকাশ্যে এই নিয়ে কিছুই স্বীকার করা হয়নি। তবে পুলিশ-প্রশাসনের একটি উচ্চপদস্থ সূত্রে এমন ঘরোয়া আলোচনার কথা অস্বীকারও করা হয়নি।

Advertisement

সূত্রের দাবি, অগস্ট থেকে এমন আলোচনার জন্য বেশ কয়েক জন প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিকে একে একে কলকাতায় ডাকা হয়। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় এসেছিলেনও কয়েক জন। কেউ কেউ আবার আসতে নারাজ। যাঁরা আলোচনায় গিয়েছেন, তাঁদের কাছে জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে তাঁদের দাবি। প্রাক্তন কেএলও-দের একাংশের দাবি, আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল জীবনকে ফেরানো বা আত্মসমর্পণ করানো। কিন্তু জীবনের সঙ্গে ‘সরকার নিয়ন্ত্রিত’ সেই আলোচনা প্রক্রিয়ায় এখনও পর্যন্ত অংশ নিতে চাননি ওই প্রাক্তন কেএলও-রা। তাঁদের কেউ কেউ দাবি করেন, কিছুটা স্বাধীনতা না পেলে এই ধরনের আলোচনায় অংশ নেওয়া অর্থহীন। তাঁদের আরও বক্তব্য, একা তাঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এর জন্য একাধিক রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে একজোটে এগোতে হবে।

এ বারে বিধানসভা ভোট শেষ হওয়ার পর থেকেই কেএলও প্রধান জীবন সিংহের নানা ভিডিয়ো-বার্তা সামনে আসতে শুরু করেছে। কখনও তিনি উত্তরবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দুষেছেন জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কখনও সমর্থন করেছেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লার আলাদা উত্তরবঙ্গ রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবিকে। কখনও আবার কোচবিহারের তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায় বা বিনয় বর্মণকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। সেই মতো সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। একই সঙ্গে ‘ট্র্যাক টু’ দৌত্যের মাধ্যমে জীবনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাওয়া হচ্ছে বলেও একটি সূত্রের দাবি।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির নানা এলাকায় আত্মসমর্পণকারী একাধিক কেএলও জঙ্গি রয়েছেন। এই দলে যেমন রয়েছেন কেএলও-র প্রাক্তন কম্যান্ডার মিল্টন এবং টম অধিকারী, তেমনই আছেন হর্ষবর্ধন, ভূপেশ দাস, মালখান সিংহও। পদাধিকারে হর্ষবর্ধন সেই সময় কেএলও-তে ছিলেন জীবনের পরেই। একটি সূত্রের দাবি, অগস্ট থেকেই পরপর কয়েক জনকে কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়।

সেখানে ‘ঘরোয়া আলোচনায়’ প্রস্তাব দেওয়া হয়, যে কোনও ভাবে জীবন সিংহের সঙ্গে কথা শুরু করা হোক। এক প্রাক্তন কেএলও বলেন, ‘‘কথা শুনে মনে হল, ওঁরা জীবনকে আত্মসমর্পণ করাতে চাইছেন।’’ আর এক প্রাক্তনের কথায়, ‘‘যে প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছেন ওঁরা, তাতে মধ্যস্থতাকারীকে আরও স্বাধীনতা দিতে হয়। সেই স্বাধীনতা কি আমরা পাব?’’ তাই এখনও মধ্যস্থতাকারী হতে নারাজ বলে দাবি তাঁদের।

জীবনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি যে যথেষ্ট কঠিন, সেটাও জানেন ওই প্রাক্তন জঙ্গিরা। গোয়েন্দা রিপোর্ট ঠিক হলে, জীবন এখন রয়েছেন মায়ানমারের জঙ্গলে। তাই দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা ছাড়া এই আলোচনা এগনো সম্ভব নয়। প্রাক্তন কেএলও-র সঙ্গে আলোচনায় কি রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও যুক্ত ছিল? এই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে চায়নি সূত্রটি।

মিল্টন এখন রাজ্য পুলিশের হোমগার্ড। থাকেন কুমারগ্রামের উত্তর হলদিবাড়িতে। জীবন সিংহের ফেলে যাওয়া বাড়িও সেখানে। হর্ষবর্ধনের বাড়ি এই এলাকারই চ্যাংমারি গ্রামে। টম থাকেন ধূপগুড়িতে। এ ছাড়াও আছেন মালখান, ভূপেশরা। তবে এঁরা কেউই প্রকাশ্যে বলতে চাননি, আলোচনায় তাঁদের ডাকা হয়েছিল কি না বা কাদের ডাকা হয়েছিল।

সহ-প্রতিবেদক: কৌশিক চৌধুরী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement