Mamata Banerjee

Tablet Money: ট্যাব কিনতে  দু’বার টাকা  বহু পড়ুয়াকে

এতে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ট্যাব কিনতে সরকার ১০ হাজার টাকা সাহায্য করে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ০৫:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

টাকা পেয়েও রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বহু ছাত্রছাত্রী ট্যাব কেনার রসিদ স্কুলে জমা দেয়নি বলে অভিযোগ উঠছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পে যে-সরকারি টাকা এক বার দেওয়ার কথা, প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাবে সেটাই দেওয়া হয়েছে দু’বার করে! ফলে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেনার ১০ হাজার টাকা দু’বার করে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। অর্থাৎ যাঁদের দু’বার নাম উঠেছে, তাঁদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকার জায়গায় জমা পড়েছে ২০ হাজার! এটা ঘটেছে অন্তত ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে!

Advertisement

প্রকল্পের নাম ‘তরুণের স্বপ্ন’। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই দেওয়া নাম। এতে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য ট্যাব কিনতে সরকার ১০ হাজার টাকা সাহায্য করে। ট্যাব কেনার রসিদ স্কুলে জমা না-পড়ার নালিশের পরে এ বার অভিযোগ, বহু স্কুলে একই ছাত্র বা ছাত্রীর নাম ট্যাবের জন্য এক বার স্কুলশিক্ষা দফতরের ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টাল’-এ তোলা হয়েছে, ফের সেই নাম তোলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্কুলেরই বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্রের পোর্টালে। ফলে তারা পেয়েছে ২০ হাজার টাকা।

এমনিতেই রাজ্য সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে অনেক বার অর্থের টানাটানির কথা শোনা গিয়েছে। তার উপরে লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, দুয়ারে সরকারের মতো কল্যাণ প্রকল্পে প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এমন সঙ্কটকালে ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেনার টাকা দু’বার করে ঢুকে যাওয়ায় প্রশাসনিক কর্তারা প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়েছেন।

Advertisement

কত পড়ুয়ার ক্ষেত্রে এমন আর্থিক গোলমাল হয়েছে, সেই ব্যাপারে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দফতর এবং শিক্ষা দফতর স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। তবে ‘রাজ্য কারিগরি শিক্ষক, প্রশিক্ষক, কর্মচারী সমিতি’র দাবি, বিভিন্ন স্কুলের ১২৮৫টি ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার বা বৃত্তি শিক্ষা কেন্দ্রের ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার পড়ুয়া দু’বার টাকা পেয়েছে। তাদের অনেকে সেই টাকা খরচও করে ফেলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।

গত ২৫ এপ্রিল বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দফতরের অধিকর্তা রাজ্যের সব বৃত্তিমূলক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধানদের উদ্দেশে একটি বিজ্ঞপ্তি (022-VET/2022-23) জারি করে অবিলম্বে অতিরিক্ত টাকা ফেরত চেয়েছেন। কোন কোন অ্যাকাউন্টে টাকা ফেরত দিতে হবে, তা-ও বলা হয়েছে। টাকা ফেরত না-পেলে দায়ী করা হবে কেন্দ্রের প্রধানদের। কিন্তু ইতিমধ্যে ছাত্রছাত্রীরা সেই টাকা খরচ করে ফেললে কী ভাবে তা ফেরত আসবে, কেউ তা জানেন না।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অধিকর্তা শৈবাল সেনগুপ্ত এই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। আর গত মার্চে অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নেওয়া সিদ্ধার্থ বসু বলছেন, ‘‘বাচ্চারা অনেকে ভুল করে শিক্ষা দফতরের পোর্টাল এবং কারিগরি শিক্ষা দফতরের পোর্টাল— দু’জায়গাতেই নাম তুলে ফেলেছে। কিছু জায়গায় হেড মাস্টারমশাইয়েরাও ভুল করে নাম তুলেছেন। এখন তো সেটা শুধরে নেওয়া হচ্ছে। চিন্তার কী আছে!’’

টাকা দু’বার করে চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করছেন কারিগরি শিক্ষা বিভাগের কর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, অল্প সংখ্যক ছাত্রছাত্রী দু’বার টাকা পেয়েছে। কিন্তু দফতরের অন্দরের খবর, প্রকৃত সংখ্যাটা কত, তা জানতে তাঁরা নিজেরাই এখনও অন্ধকারে হাতড়াচ্ছেন। বিভিন্ন বৃত্তি শিক্ষা কেন্দ্র থেকে সেই সব নাম জানার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেছেন রাজ্য কারিগরি শিক্ষক, প্রশিক্ষক, কর্মচারী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী।

এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের অভিযোগ, সরকারি দফতরে কাজের সমন্বয়ের অভাবে সরকারি অর্থ নয়ছয় হচ্ছে। ‘‘এর আগে দেখা গিয়েছিল, অনেক ছাত্র বা ছাত্রী নবম শ্রেণিতে একটি স্কুলে সবুজসাথীর সাইকেল পেয়েছে, আবার দশম শ্রেণিতে টিসি বা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য স্কুলে যাওয়ার পরে সেখানেও তাকে সাইকেল দেওয়া হয়েছে। এ-সবের কোনও তদন্ত কখনও হয় না,’’ ক্ষোভের সঙ্গে বললেন সুকুমারবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement