প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটের পরে দলের সংগঠন কার্যত ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে বলে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে জানালেন বিজেপির জেলা এবং মণ্ডল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রের খবর, এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের হাতে গরম কোনও সমাধান রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখাতে পারেননি। তবে তাঁরা কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলেছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ সোমবার দলের হেস্টিংস কার্যালয়ে দু’দফায় সাংগঠনিক বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকে ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) এবং দ্বিতীয়টিতে কলকাতা উত্তর, দক্ষিণ এবং উত্তর শহরতলির জেলা নেতৃত্ব ও মণ্ডল সভাপতিদের ডাকা হয়। বিজেপি সূত্রের খবর, দু’টি বৈঠকেই জেলা এবং মণ্ডলের অনেক নেতা বলেন, ভোটের ফল প্রকাশের পর অনেক নেতা-কর্মীকেই আর দলের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না, দলের সঙ্গে যোগাযোগটুকুও রাখতে চাইছেন না অনেকে। কারণ হিসাবে তাঁরা তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’-এর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। দলীয় সূত্রের খবর, জবাবে শিবপ্রকাশ তাঁদের বলেন, দলের রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে সাবধানে কাজ করতে হবে। তবে ঠিক কী করলে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীরা আবার কাজে ফিরবেন, তা নিশ্চিত ভাবে বলেননি রাজ্য বা কেন্দ্রীয় কোনও নেতা।
বিজেপি সূত্রের আরও খবর, ওই বৈঠকে জেলা এবং মণ্ডলের অনেক নেতা ভোটে পরাজয়ের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ে গোলমালকে দায়ী করেন। প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য এবং জেলা নেতাদের মত না শুনে দিল্লি নিজের মতো চলেছিল বলে দলের একাংশের অভিযোগ আছে। দলীয় সূত্রের খবর, শিবপ্রকাশ এ দিন বৈঠকে একটি ই মেল আইডি এবং একটি ফোন নম্বর দিয়ে বলেন, যাঁর যা অভিযোগ এবং পরামর্শ আছে, তাঁরা যেন তা ওই ই মেল বা ফোন নম্বরে জানান। প্রার্থী বাছাই নিয়ে জেলা এবং মণ্ডল স্তরের নেতাদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটিকে জানানো হবে বলেও শিবপ্রকাশ বৈঠকে আশ্বাস দেন। মণ্ডল স্তরে দলের এবং শাখা সংগঠনগুলির কমিটিগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও ভোটে পরাজয়ের কারণ বলে অনেকে বৈঠকে মত প্রকাশ করেন।
এ দিনের বৈঠকে বহু মণ্ডল সভাপতি অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ জেনে তা লিখিত ভাবে রাজ্য নেতৃত্বকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা সভাপতিদের।
সিবিআইয়ের আধিকারিকরা রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের তদন্ত করতে এলে তাঁদের বিশদ তথ্য দেওয়ার নির্দেশও এ দিনের বৈঠকে দেওয়া হয়েছে। সেই কাজের জন্য দলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় এক জন করে আহ্বায়ক, সহ আহ্বায়ক এবং আইনজীবী নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। পুরভোটের কথা মাথায় রেখে ওয়ার্ড কমিটি ফেরানো যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে এ দিনের বৈঠক থেকে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘ভোটের পরে জেলা স্তরের নেতাদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক হয়নি। সেটা এবং আমাদের গত ১০-১৫ দিনের আন্দোলন আজকের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল। ভোটের পরে দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে সিবিআইকে কী ভাবে সহযোগিতা করা হবে, এই সব নিয়েও কথা হয়েছে বৈঠকে।’’