উত্তর কলকাতার মুরলীধর সেন লেনের বিজেপির সদর দফতর। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিজেপি এখন মূলত পরিচালিত হয় বিধাননগরের সেক্টর ফাইভের দফতর থেকে। তবে এখনও খাতায়কলমে রাজ্যের সদর দফতর উত্তর কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে। সেই দফতরে এসেই বড় মাপের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’।
গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপিতে ‘আদি’ নেতাদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরে রাজ্য এবং জেলায় জেলায় নতুন কমিটি তৈরি হওয়ার পরে এই নামের একটি সংগঠন তৈরি করেন বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিক্ষুব্ধ শিবির। অতীতে ‘বিজেপি বাঁচাও কমিটি’ জেলা স্তরে তো বটেই, কলকাতায় সদর দফতরে এসেও বিক্ষোভ দেখিয়ে গিয়েছে। এ বার বড় মাপের বিক্ষোভের প্রস্তুতি। আগামী বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্ষুব্ধদের নিয়ে এসে রাজ্য দফতরে জমায়েতের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, বীরভূম জেলা থেকে কর্মীদের নিয়ে আসতে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগির টিকিটও কেটে ফেলেছেন। আবার বসিরহাট এবং হাওড়া গ্রামীণ এলাকা থেকেও বাসে করে কর্মী আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই গোষ্ঠীর নেতারা দাবি করছেন, দলের বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব সঠিক ভাবে দল পরিচালনা করতে যে পারছেন না, সেই অভিযোগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানানোর পরেও কাজ না হওয়ায় এ বার এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য নেতারা যে এমন পরিকল্পনার কথা জানেন না, তা নয়, তবে কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। যদিও একান্ত আলোচনায় তাঁরা এটা মানছেন যে, এ বার যা পরিকল্পনা শোনা যাচ্ছে তাতে দলকে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে। অতীতে অনেক সময়েই এই ধরনের বিক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে সেটা ছিল নির্দিষ্ট কোনও এলাকার। বিক্ষুব্ধদের সংখ্যাও ছিল কম। কিন্তু এ বারের যে পরিকল্পনা তাতে দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গা থেকেই বিক্ষুব্ধ নেতা, কর্মীরা যোগ দিতে পারেন।
এ বারের বিক্ষোভ সমাবেশের মূল উদ্যোগ নিয়েছেন হাওড়ার নেতা আশিস সাউ এবং বসিরহাটের দীপককুমার সরকার। দীপক আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল থেকে অনেককে নিয়ে এসে দল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। পুরনো নেতাদের কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখনও সেটাই হচ্ছে। অনেক জায়গাতেই বহু নেতা, কর্মী দলের হয়ে কাজ করছেন না। কারণ, এখনও তৃণমূল থেকে আসা নেতাদেরই জেলায় জেলায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ আশিস রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাও বলেন যে, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে যা হয়েছে তা সামনের লোকসভা নির্বাচনে হতে দেওয়া যাবে না। আমরা যাঁরা মনে-প্রাণে বিজেপিকে ভালবাসি তাঁরা তাই এখন থেকেই প্রতিবাদ জানাতে চাই। সেই উদ্দেশ্যেই কলকাতা অভিযান।’’
একই রকম বক্তব্য বীরভূমের রামপুরহাটের নেতা অভয়শঙ্কর রায়ের। তিনি বলেন, ‘‘বীরভূম জেলাতেও দলের ভাল ফল হওয়ার কথা। কিন্তু এখন রাজ্য নেতৃত্ব যে ভাবে চলছে তাতে সে সব কিছুই সম্ভব নয়। এর জন্যই আমরা রাজ্য দফতরে বিক্ষোভ দেখাতে চাই।’’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে ফেলেছেন জেলার বিভিন্ন শহরের বিজেপি কর্মীরা। দুপুরের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছে বিক্ষোভে শামিল হবেন তাঁরা। দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া থেকেও অনেক কর্মী বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন বলে দাবি করেছেন অভয়শঙ্কর।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিভিন্ন জেলাতেই দলীয় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মথুরাপুর থেকে যাদবপুরের কর্মীরা নতুন জেলা কিমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই ক্ষোভ দেখানো হয়েছে বিধাননগরের দফতরে। বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে দলীয় দফতরে তালাবন্দি হয়ে থাকতে হয়েছে। দিন কয়েক আগেই বারুইপুরে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতা তথা দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। এ বার বিজেপির আদি দফতরেই বিক্ষোভের পরিকল্পনা ‘আদি’ নেতা, কর্মীদের।