কী কারণে মেধাবী ছাত্রের এই পরিণতি হল তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। নিজস্ব চিত্র
উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলেন। স্বপ্ন ছিল অধ্যাপক হওয়ার। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়ার দিকে ঝোঁকেননি। মেধাবী ছাত্র হৃষীক কোলে বরাবরই অঙ্কে ভাল। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে চেয়েছিলেন। সেই সুযোগও আসে। পদার্থবিদ্যা নিয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু কলেজে মাত্র চারটি ক্লাস করে সে। তার পরই নিখোঁজ হয়ে যান হুগলির সিঙ্গুরের হৃষীক।
গত বৃস্পতিবার, পয়লা অগস্ট সকালে হৃষীকের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় কলকাতার বেকবাগানের কাছে। তার পর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পর শুক্রবার রাতে হৃষীক কোলের (১৮) দেহ মিলল বেলুড়ে রেললাইনের পাশে গলাকাটা অবস্থায়।
কী ভাবে এবং কারণে হৃষীকের এই পরিণতি হল? এ বিষয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হৃষীকের বাবা কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মার সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন, ছেলে শহুরে আদবকায়দা এবং ইংরেজি ভাল না-জানায় ক্লাসে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। তাই কিছুটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তা বলে যে তিনি এ ভাবে আত্মঘাতী হবেন! এটা মানতে পারছে না পরিবার।
প্রশ্ন উঠছে, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর উদ্দেশে কি কেউ তির্যক কোনও মন্তব্য করেছিলেন? যা মেনে নিতে পারেননি হৃষীক। তেমন কোনও ঘটনা ঘটেছিল কি না, এখনও জানা যায়নি। হৃষীকের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের লোকজনের দাবি, তিনি উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে ভালই নম্বর পেয়ে ছিলেন। ফলে শুধুমাত্র ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার জন্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন, তা হতে পারে না। তাঁর এক পরিচিত বলেছেন, ‘‘হৃষীক খোলামেলা ছিল। সবার সঙ্গে মিশতে পারত। ও এই কাজ করতেই পারে না।’’ একই কথা জানিয়েছেন তাঁর শিক্ষকরাও।
সিঙ্গুর থেকে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়তে এসেছিলেন হৃষীক। বৃহস্পতিবার তাঁর দেহ পাওয়া যায় বেলুড়ের কাছে রেললাইনে। বেলুড় জিআরপি জানিয়েছে, উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝামাঝি অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের দেহ পাওয়া গিয়েছিল। মাথা ও ধড় পড়ে ছিল আলাদা ভাবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হৃষীকের পরিবারের লোকজন দেহটি শনাক্ত করেন।
বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ দায়েরের পর হস্টেলের কাছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোডে একটি সিসি ক্যামেরায় হৃষীকের ছবি ধরা পড়ে। সেখানে দেখা যায়, ১ অগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১২ নাগাদ ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছেন হৃষীক। বন্ধুদের বলে বেরিয়েছিলেন, বালতি কিনে কলেজে যাবে। রেল পুলিশ জানিয়েছে, হৃষীকের দেহ উদ্ধারের পর তাঁর কাছ থেকে হাওড়া স্টেশন থেকে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাটা সিঙ্গুর যাওয়ার ট্রেনের একটি টিকিট এবং সুইসাইড নোট মেলে। ঘটনাস্থলে ধানবাদ আইআইটি লেখা একটি নীল ব্যাগও পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: রেললাইনে দেহ মিলল সেন্ট জেভিয়ার্সের কৃতী ছাত্রের, ইংরাজি বলতে না পারার জন্যই কি সুইসাইড?
আরও পড়ুন: দু’হাত না থাকায় স্বপ্নের পদার্থবিদ্যা পড়া নিয়ে সংশয়ে দীপক