হাসপাতালে হুমায়ুন কবীর। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
স্কুলে যাওয়ার আগে সাইকেলে ধান নিয়ে মিলে পৌঁছে দিতে গিয়েছিল নবম শ্রেণির ছাত্রটি। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। মিলের ভিতরে পড়ে গিয়ে তার হাত ঢুকে যায় ধান কাটার মেশিনে। বাঁ হাতের কনুইয়ের নীচের অংশ কেটে বেরিয়ে যায়।
প্লাস্টিকের ব্যাগে কাটা অংশটি নিয়ে জেলার দুই হাসপাতাল ঘুরে শেষে এসএসকেএমে পৌঁছয় তেরো বছরের কিশোরের পরিবার। সেখানকার চিকিৎসকদের চেষ্টায় হাত জুড়েছে ছেলেটির।
মুর্শিদাবাদের জলঙ্গীর বাসিন্দা আবুল শেখের ছেলে হুমায়ুন কবীর। শনিবার সকালে স্থানীয় চালকলে ধান পৌঁছে দিতে গিয়েছিল সে। সেখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। হুমায়ুনের পরিবার জানায়, কাটা হাতের অংশটি নিয়ে তাঁরা প্রথমে রানিনগর মহকুমা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাঁদের বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ব্যান্ডেজ করে কাটা হাতের রক্তপাত আটকানোর ব্যবস্থা করেন। তাঁরাই হুমায়ুনকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
সে দিনই ব্যাগের ভিতরে বরফ ভরে তার মধ্যে হাতের কাটা অংশ নিয়ে কলকাতা রওনা হয় ছাত্রটির পরিবার। তবে পথে সম্পূর্ণ গলে যায় বরফ। সন্ধ্যায় এসএসকেএমে পৌঁছনোর পরে চিকিৎসকেরা আর দেরি করেননি। দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসক মনোরঞ্জন সাউ ও আরও কয়েক জন প্রায় ছ’ঘণ্টা ধরে ওই কিশোরের হাত ‘রি-ইমপ্লান্টেশন’ করেন।
এসএসকেএম সূত্রের খবর, হুমায়ুনের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। যদিও চিকিৎসকেরা জানান, হাত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে এখনও কিছু প্রক্রিয়া বাকি। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘কমবয়সিদের ক্ষেত্রে কেটে যাওয়া অঙ্গ জোড়ার কাজ আরও জটিল। কারণ, তাদের শিরা বড় নয়। হুমায়ুনের হাতের স্নায়ু, শিরা, ধমনী— সব ছিঁড়ে গিয়েছিল। দু’দফায় অস্ত্রোপচার করে সেগুলি জোড়া লাগানো হয়েছে। আপাতত সে সুস্থ।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অসতর্কতা ও পরিকাঠামোর অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেটে যাওয়া অঙ্গ ঠিক মতো হাসপাতালে পৌঁছয় না। ফলে অস্ত্রোপচার করা হলেও জোড়া অংশ ধীরে ধীরে পচে যায়। হুমায়ুনের অস্ত্রোপচারের সাফল্য এ রাজ্যে ‘রি-ইমপ্লান্টেশনকে’ কয়েক ধাপ এগিয়ে দিল।