কল্যাণময়ের অসুস্থতার কথা এর আগেও আদালতকে জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবী। ফাইল চিত্র।
জেলে একটি বিছানা চান মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের কাছে তাঁর আইনজীবীর আবেদন, উনি অসুস্থ। বয়স হয়েছে। জেলের মেঝেতে শুতে পারছেন না, তাই আদালত তাঁর জন্য এ টুকু ব্যবস্থা করুক।
বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই কল্যাণময়ের শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। ‘কার্ডিয়াক’ সমস্যা তো ছিলই। নিউমোনিয়ার সমস্যাও রয়েছে। কলকাতায় হঠাৎ পড়া ঠান্ডায় জেলের মেঝেতে বয়স্ক কল্যাণময়ের অসুবিধা হওয়া অস্বাভাবিক নয় বলেই উল্লেখ করেছেন তাঁর আইনজীবী।
বস্তুত, গত বছর ২৩ জুন শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে যখন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে, তখনই কল্যাণময়ের বয়স ছিল ৬৯ বছর ৪ মাস। যা পর্ষদ সভাপতি হিসাবে স্কুলশিক্ষা দফতরের বেঁধে দেওয়া বয়ঃসীমার ১ বছর ৪ মাস বেশি! কল্যাণময়ের আইনজীবী সুমন গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি গতবেশ কয়েক বছর ধরেই হৃদ্রোগের সমস্যায় ভুগছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিবিআই গ্রেফতার করে কল্যাণময়কে। কাঁকুড়গাছির কাদাপাড়ার বাসিন্দা কল্যাণময় ২০১২ সাল থেকে ছিলেন পর্ষদের দায়িত্বে। নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি সিবিআই তখন কল্যাণময়ের ‘বেআইনি ভাবে’ পদ আঁকড়ে থাকার কথাও আলাদা করে উল্লেখ করেছিল। তখনই জানা যায়, তিনি পর্ষদের সভাপতি থাকাকালীন ওই পদের মেয়াদ দু’বার বাড়ানো হয়। প্রথমে এই বয়ঃসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করেছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। তার পর ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৮ করা হয়। কল্যাণময় অবশ্য ৬৮ পেরিয়েও আরও ১৬ মাস সবেতন সামলেছেন পর্ষদের দায়িত্ব। অতিরিক্ত বেতন নিয়েছেন ৩২ লক্ষ টাকা।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কল্যাণময় গত ১১৩ দিন ধরে রয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে। সিবিআইয়ের অভিযোগ ছিল, শান্তিপ্রসাদ সিংহের সঙ্গে মিলে ‘অযোগ্য’দের সুপারিশপত্রে সই করেছেন কল্যাণময়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বাগ কমিটির রিপোর্টেও বলা হয়েছিল, এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সভাপতি শান্তিপ্রসাদ ‘অযোগ্য’দের প্রার্থী তালিকা দিতেন কল্যাণময়কে। কল্যাণময় সেই তালিকা অনুসারে সুপারিশপত্র তৈরি করতেন। পরে কল্যাণময়ের গ্রেফতারির পর প্রধানশিক্ষকদের একটি সংগঠন অভিযোগ করেছিল, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন ‘আপাদমস্তক দুর্নীতিপরায়ণ’ এবং ‘অহংকারী’। অকারণে ‘দুর্ব্যবহার’ করতেন। আবার তাঁর আমলেই মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন সমাজমাধ্যমে বার বার ভাইরাল হয়েছে প্রশ্নপত্র। যদিও কল্যাণময়ের আইনজীবী প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, যা হয়েছে তা শান্তিপ্রসাদের হাত দিয়েই হয়েছে। তাই তাঁর মক্কেলের এ ক্ষেত্রে ভূমিকা নেই কোনও।