সংস্থার প্রধান হিসাবে কি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মতো ঘটনার দায় এড়ানো যায়? প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। প্রতীকী ছবি।
এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এ ব্যাপারে আদালতের পর্যবেক্ষেণ, বিষয় যখন শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, সেখানে সংস্থার সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি এত সহজে দায় এড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এটা কোনও পোস্টমাস্টারের চাকরি নয়। মনে রাখবেন এখানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। সেখানেও যদি দুর্নীতি হয়, তবে এটা তো সমাজের সঙ্গে বেইমানি করা হল।’’
বুধবার হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে সুবীরেশের জামিনের মামলার আবেদনটির শুনানি ছিল। সুবীরেশের আইনজীবী আদলতকে জানান, ‘‘তাঁর মক্কেল এসএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন নিয়োগ দুর্নীতি হয়নি। চেয়ারম্যান থাকার পর তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন।’’ আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পরই বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘তিনি তো আর ভারতের রাষ্ট্রপতির ভাইস চ্যান্সেলর নন। অতএব, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নয়। আমরা জানতে চাই, দুর্নীতিতে সুবীরেশের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে।’’
আদালতকে এর পর সুবীরেশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ দেন তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘উনি পদে থাকাকালীন এই সব ঘটনা ঘটেনি। ২১ অক্টোবরের চার্জশিট মোতাবেক আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর মৌখিক নির্দেশেই প্রোগ্রামিং অফিসার উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) পরিবর্তন করেছেন। কম নম্বর পেয়েছেন এমন প্রার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে। এমনকি, এসএসসির ওয়েবসাইটেও নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য তৈরি কমিটির মাথায় ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিনহা। আমার মক্কেলকে প্রথমে সাক্ষী হিসাবে ডাকা হয়েছিল। তার পরে গ্রেফতার করা হয়।’’
এর পরেই আইনজীবীকে ওই প্রশ্ন করেন বিচারপতি বাগচী। তিনি জানতে চান, ‘‘একটি সংস্থার সর্বোচ্চ পদে ছিলেন। সেই জায়গায় কী ভাবে আপনাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এড়িয়ে যেতে পারেন? যিনিই অভিযোগ আনুন, আপনি এত দিন কেন সচেতন হননি?’’
বিচারপতি এক রকম ভর্ৎসনার সুরেই বলেন, ‘‘সংস্থার প্রতিনিধি হিসাবে আপনার দায়িত্ব রয়েছে। এটা কোনও পোস্টমাস্টারের চাকরি নয়। মনে রাখবেন এখানে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। সমাজের এক জন হিসাবে কেউ কি আশা করতে পারেন না যে অন্তত শিক্ষক নিয়োগ স্বচ্ছ ভাবে হবে? সেখানেও যদি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তবে এটা তো সমাজের সঙ্গে বেইমানি করা হল।’’