Partha Chaterjee

SSC recruitment scam: গ্রেফতারের পরেও পার্থ কি মন্ত্রী থাকবেন? দলের মহাসচিব? ‘ঘটনাপ্রবাহ’ দেখে সিদ্ধান্ত তৃণমূলের

শিল্প ছাড়াও দু’টি দফতর রয়েছে পার্থর হাতে। সেই সঙ্গে তিনি দলের মহাসচিবও। প্রতিটি বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ১২:৪৮
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফাইল চিত্র

শুক্রবার দিবারাত্রি জেরার পরে শনিবার সকালেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করেছে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁর গ্রেফতারির পর থেকেই বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পার্থকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছে। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত সে ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীর তরফে জানা যায়নি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, পার্থ তৃণমূলের মহাসচিব পদেও রয়েছেন। দলীয় কাঠামোয় যা তৃণমূলের সভানেত্রীর ঠিক পরেই। গ্রেফতার হওয়ার পর সেই বিষয়েও দল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না, তা নিয়েও তৃণমূলের পক্ষে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। শনিবার তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দল ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছে। যথাসময়ে দল সিদ্ধান্ত জানাবে।’’ পার্থকে কি মন্ত্রিত্ব বা দলের পদ থেকে কি সরানো হবে? জবাবে কুণাল বলেন, ‘‘দল নির্দিষ্ট সময়ে সব জানিয়ে দেবে।’’

দলের পদ থেকে সরানো বা দল থেকে সাসপেন্ড করার মতো সিদ্ধান্ত দলীয় স্তরেই নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে গেলে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালকে চিঠি লিখে তার সুপারিশ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা লিখবেন কি না, তা নিয়েই দলের অন্দরে জল্পনা বাড়ছে। তবে শুক্রবার রাতে ইডির থাকায় পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধারের পর কুণাল টুইটে লিখেছিলেন, ‘ইডি যে টাকা উদ্ধার করেছে, তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এই তদন্তে যাঁদের নাম আসছে, এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁদের বা তাঁদের আইনজীবীদের। কেন দলের নাম জড়িয়ে প্রচার চলছে, দল তা নজর রাখছে। যথাসময়ে বক্তব্য জানাবে।’

Advertisement

অর্থাৎ, তখনই পার্থের সঙ্গে একটা ‘দূরত্ব’ তৈরি করেছিল তৃণমূল। যা থেকে মনে করা হচ্ছে, পার্থকে মন্ত্রিত্ব এবং দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে শনিবার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কি না, আপাতত সেটাই দেখার।

তবে বিরোধীদের স্বর ক্রমশই উচ্চগ্রামে যাচ্ছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘একটি প্রজন্মকে প্রতারিত হতে হয়েছে। যোগ্য মেধাবী চাকরিপ্রার্থীরা ক্লাসরুমের জায়গায়, পথে বসে প্রতিবাদ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের চোখের জল বৃথা যাবে না। যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনা করে মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট যে তদন্ত প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেন, তার প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। আইনি পদক্ষেপের ফল সবে মাত্র পাওয়া শুরু হয়েছে। হিমশৈলের চূড়া সবে মাত্র দৃশ্যমান হয়েছে।’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী পার্থর গ্রেফতারের পরে মুখ্যমন্ত্রীর কী ভূমিকা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সুজন বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূলের মহসচিব। সুতরাং, তৃণমূল দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। রাজীব কুমারের সময় মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় বসেছিলেন। এ বার কী করবেন?’’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার পার্থের বাড়িতে ইডি আধিকারিক জেরা শুরু করার পরে তৃণমূলের পক্ষে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। সেখানে কুণাল ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেখানে এই জেরার পিছনে ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধি’ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। একই সঙ্গে তৃণমূলের পক্ষে পার্থের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শুক্রবার সকালে মুখ খুলেছিলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্থা করা বিজেপির হাতিয়ার। বাংলায় বিজেপির কিছু নেই। বাংলায় বিজেপির শক্তি ইডি।’’

কিন্তু সন্ধ্যায় অর্পিতার বাড়ি থেকে নগদ ২০ কোটি টাকা উদ্ধারের পরেই পুরো বিষয়টির সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি করে তৃণমূল। ইডি দাবি করে অর্পিতা পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’। শনিবার পার্থকে গ্রেফতারের পরে দুপুর পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট মন্তব্য করা হয়নি তৃণমূলের পক্ষে। তবে এক তৃণমূল নেতা একান্ত আলোচনায় জানান, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা নেবেন।

প্রসঙ্গত, শনিবার গ্রেফতার হওয়ার পর হাসপাতালে যাওয়ার এক ফাঁকে পার্থ একটি চ্যানেলকে জানিয়েছেন, তিনি তখনও পর্যন্ত নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তিনি তা-ও জানেন না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পার্থকে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রেফতারির পর বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য। শনিবার দুপুর পর্যন্ত মমতা ওই বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। কোনও প্রতিক্রিয়াও জানাননি। মমতা শনিবার সকালে একটিই টুইট করেছেন। সকাল ৯টা নাগাদ করা সেই টুইটে স্বাধীনতা সংগ্রামী বালগঙ্গাধর তিলকের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সূচনালগ্ন থেকেই দলে রয়েছেন পার্থ। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী পার্থ আশুতোষ কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্র পরিষদ ও পরে কংগ্রেস করেন। তৃণমূল গঠনের পরে চাকরি ছেড়ে পুরো সময়ের রাজনীতিক হন। বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে হন দলের মহাসচিব। প্রথম বার নির্বাচনে জেতেন ২০০১ সালে। বেহালা পশ্চিম আসন থেকে সেই থেকে টানা জিতে চলেছেন তিনি। বাম জমানায় বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালনের পরে তৃণমূল জমানায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হয়েছেন। স্কুল শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন। এখন শিল্পের পাশাপাশিই তাঁর হাতে রয়েছে পরিষদীয় দফতর। এ ছাড়াও তিনি তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স দফতরেরও মন্ত্রী। ফলে পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ওই দফতরগুলি কাদের হাতে যাবে, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হবে মমতাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement