পার্থের গ্রেফতারির পর কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করে ইডি। ফাইল চিত্র।
সোমবার ভোরে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভুবনেশ্বর এমসে নিয়ে যেতে হবে। নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের। সঙ্গে যাবেন এসএসকেএমে পার্থর চিকিৎসক এবং আইনজীবী।
এইমস ভুবনেশ্বরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, মেডিসিন, এন্ড্রোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসক দিয়ে দল তৈরি হবে। যাঁরা পার্থর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। সোমবার বিকেল ৩টের মধ্যে এমস ভুবনেশ্বরকে পার্থর শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে রিপোর্ট দিতে হবে। রিপোর্টের প্রতিলিপি তদন্তকারী আধিকারিক, এসএসকেএম হাসপাতাল এবং পার্থের আইনজীবীকে দিতে হবে। ইডির তদন্তকারী অফিসারকে পার্থকে কোর্টে হাজির করার জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের। সোমবার বিকেল ৪টায় নিম্ন আদালতে শুনানি।
একটু পরেই রয়েছে শুনানি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘অবশ্যই অসুস্থ’। আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে বললেন তাঁর এক আইনজীবী অরূপ পোদ্দার। তিনি জানান, কোথায় চিকিৎসা হবে, সেটা আদালতের বিচার্য বিষয়।
ইডি আইনজীবীর দাবির প্রেক্ষিতে বিচারপতি চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘কল্যাণী এমসের উপর আমার ভরসা নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আপনি ভুবনেশ্বর এমসে দেখুন।’’ যার পরে ইডির আইনজীবী জানান, তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। শেষে বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি কোথাও নিয়ে যেতে দেব না। সেখানকার চিকিৎসকেরা এখানে আসুন। আপনিও কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেলকে বলুন।’’
শুনানি চলাকালীন ইডির আইনজীবী শ্রীরাজুকে বিচারপতি চৌধুরী বলেন, ‘‘কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি ও জেনারেল মেডিসিন দিল্লির এমসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে করানো হোক।’’ পাল্টা ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘দিল্লি কেন, কল্যাণী এমসেও হতে পারে।’’
হাই কোর্টে শেষ হল পার্থ-মামলার শুনানি। একটু পরেই নির্দেশ দেবে কলকাতা হাই কোর্ট। ইডির দাবি, পার্থ ‘ড্রামা’ করছেন। পার্থের আইনজীবীর দাবি ভিন্ন।
এসএসসি মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন, এসএসকেএমে ভর্তি হওয়া যাবে না। ঘটনাচক্রে গ্রেফতারির পর সেই এসএসকেএমে ভর্তি হন পার্থ। যা নিয়ে বাদানুবাদে জড়ালেন দু’পক্ষের আইনজীবী। ইডির আইনজীবী বলেন, ‘‘ওঁকে (পার্থ) সর্বোত্তম হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি আমরা। এমস কল্যাণীতে নিয়ে যাব। সঠিক পরীক্ষা হবে।’’
পার্থর আইনজীবী দেবাশিস রায়ের দাবি, ইডি আইনজীবীকে সঠিক দেয়নি। ইডি হাসপাতাল পরিবর্তন নিয়ে আলাদা আবেদন জানিয়েছিল। সেটা আগামিকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারক শুনানির জন্য রেখেছেন।
প্রতিটি প্রভাবশালীর নিরাপদ জায়গা এসএসকেএম। মন্ত্রী পার্থের আইনজীবীকে এমনই বললেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। পার্থের আইনজীবীকে বিচারপতি বলেন, ‘‘এসএসকেএম প্রতিটি প্রভাবশালীর জন্য নিরাপদ জায়গা।’’ তিনি নাম নেন মদন মিত্র এবং অনুব্রত মণ্ডলের। এক জন তৃণমূল বিধায়ক এবং অন্য জন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।
ইডির আইনজীবী সওয়াল করেন স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশেই তদন্ত হচ্ছে। দু'দিন আগে ২১ কোটির বেশি টাকা এবং ২০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। নিম্ন আদালতে জামিন বাতিল হয়েছে। সোমবার ফের আদালতে তোলা হবে মামলা। এই নির্দেশের পর এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশ হয়। সেখানে ইডির কথা শোনাই হয়নি। অথচ, নিম্ন আদালতে তাঁকে তোলার আগে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁরা ফিট সার্টিফিকেট দেয়। তার পরও চিকিৎসায় বাধা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু বার বার নির্দিষ্ট একটি হাসপাতালেই কেন? এই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে দুর্নীতি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।’’
ওই হাসপাতালে গেলে ইডি অফিসারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সহযোগিতা করছে না ইডির সঙ্গে।
ইডির দাবি, মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সুস্থ বলে জানিয়েছে আদালত। তা ছাড়া, নিজের পছন্দমাফিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক্তিয়ার এই মুহূর্তে তাঁর নেই। ইডির আইনজীবী আদালতে এ-ও বলেন, ‘‘ইডি আধিকারিকদের হুমকি দিয়েছেন পার্থ। ডনের মতো ব্যবহার করেছেন তিনি।’’
শনিবার পার্থকে তোলা হয় ব্যাঙ্কশাল আদালতে। তাঁকে দু’দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু ইডি সূত্রের খবর, পার্থকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করার যে নির্দেশ দিয়েছে নিম্ন আদালত, তাতে তারা ‘অসন্তুষ্ট’। নিয়ম মেনে শুনানি হয়নি বলে তাদের অভিযোগ। তাই নিম্ন আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শনিবার রাতেই প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে টানা প্রায় ২৭ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীকে। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার সকালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া জোকা ইএসআই হাসপাতালে।