সিবিআই দফতরে শান্তিপ্রসাদ সিংহ। ছবি: রণজিৎ নন্দী
শুধু কাগুজে নথি নয়, স্কুলে নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কম্পিউটারও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সিবিআইয়ের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এসএসসি-র উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ তাদের জানান, কম্পিউটারের যান্ত্রিক ত্রুটিই নাকি সব সমস্যার কারণ। হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এসএসসি-র দুর্নীতির মামলার যোগসূত্রে মঙ্গলবার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে শান্তিপ্রসাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।
সিবিআই জানিয়েছে, প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি-র নিয়োগকর্মে ব্যবহৃত কম্পিউটার এবং নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হবে। কম্পিউটারে কোনও রকম কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছিল কি না, তা যাচাইয়ের জন্য প্রয়োজনে করা হবে ফরেন্সিক পরীক্ষাও। উপরন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য সব চাকরিপ্রার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা তলছে বলে তদন্তকারী সূত্রের খবর।
এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক পর্যায়ে এসএসসি-র সব নথি ও কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এই ধরনের দুর্নীতিতে প্রভাবশালী-যোগ থাকাটা স্বাভাবিক। শান্তিপ্রসাদ এবং এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির অন্য চার কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সম্ভাব্য প্রভাবশালী যোগসূত্রকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।’’ তদন্তকারীদের দাবি, নির্দেশ অনুযায়ী শান্তিপ্রসাদ প্যানেল তৈরির সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু ৮৯ জন অকৃতকার্য প্রার্থীর নাম কী ভাবে নিয়োগের প্যানেলে ঢুকে পড়ল, সেই বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে নানা প্রশ্নের মুখে জানিয়েছেন শান্তিপ্রসাদ। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই উপদেষ্টা বলেছেন, নির্দেশিকা অনুযায়ী তিনি প্যানেল তৈরি করেছেন। কিন্তু কার নির্দেশে তা করেছেন, তার স্পষ্ট উত্তর তিনি দেননি বলে জানাচ্ছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।
কম্পিউটারের যান্ত্রিক ত্রুটির দরুন অকৃতকার্যদের নাম যদি নিয়োগের তালিকায় এসে গিয়ে থাকে, তৎক্ষণাৎ তিনি তা কেন শুধরে নেননি, সেই প্রশ্ন উঠছে স্বভাবতই। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এই সব প্রশ্নের উত্তরে পরের পর অসংলগ্ন উত্তর দিয়ে গিয়েছেন শান্তিপ্রসাদ। তদন্তকারীদের আরও দাবি, উচ্চ আদালতের নির্দেশেই উপদেষ্টা কমিটির আরও চার কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি দুর্নীতির তদন্তে নানা তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। অসংলগ্ন তথ্য দিয়ে তদন্তকে বিপথে চালু করা যায় না।’’ তদন্তকারীরা জানান, চাকরি পাওয়া অকৃতকার্য প্রার্থীদেরও জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে তাঁরা নিয়োগ-তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলেন, ওই প্রার্থীদের প্রশ্ন করে তা জানার চেষ্টা হবে। সব জানার পরেও কী ভাবে তাঁরা চাকরিতে যোগ দিলেন, জানতে চাওয়া হবে তা-ও।