একটি হেলিকপ্টার। আর তাকে নিয়েই চলছে যাবতীয় পরীক্ষা।
এত দিন চলছিল হলদিয়া, দুর্গাপুর, শান্তিনিকেতন। সেখানে ভর্তুকি দিয়েও যাত্রী মেলেনি। তাই ওই তিনটি রুট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে চালু হচ্ছে তারাপীঠ, দিঘা ও মায়াপুর।
রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেহালা যেতে হবে সেই হেলিকপ্টার চড়তে। সেখান থেকে উড়ে তারাপীঠ। একই ভাবে দিঘা। এই দুই জায়গায় সড়ক পথে পৌঁছতে কলকাতা থেকে সময় লাগে চার-পাঁচ ঘণ্টা। এ দিকে উত্তর কলকাতা থেকে বেহালা পৌঁছতে প্রায় দু’ঘণ্টা এমনিতেই লেগে যাবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্য পাকা। ওই দুই জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে হেলিপ্যাড বানানোর কাজ চলছে।
তারাপীঠ ও দিঘার এক দিকের ভাড়া দু’হাজার টাকা। ১১ আসনের এই হেলিকপ্টারে বড় জোর ৭ জন যাত্রী নেওয়া যাচ্ছে। কারণ, তাঁদের মালপত্র ও জ্বালানি নিতে গিয়ে যত ওজন হচ্ছে, তাতে ১১ জন যাত্রী নেওয়া সম্ভব নয়। হিসেব অনুযায়ী, সপ্তাহে এক দিন দিঘা বা তারাপীঠ যাতায়াত করে ভাড়া মিলবে ২৮ হাজার টাকা। তা-ও যদি সাত জন যাত্রী পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, সপ্তাহে শুধু রবিবার দিঘা যাবে ওই হেলিকপ্টার। প্রশ্ন উঠেছে, যিনি দু’হাজার টাকা খরচ ওই হেলিকপ্টারে দিঘা যাবেন, তিনি সে দিনই কি আরও দু’হাজার টাকা খরচ করে ফিরে আসবেন? না এলে হেলিকপ্টারে ফিরতে গেলে তাঁকে এক সপ্তাহ দিঘায় অপেক্ষা করতে হবে। সরকারি সূত্রের খবর, প্রয়োজনে সপ্তাহে একাধিক দিনও দিঘায় হেলিকপ্টার চালানো হতে পারে।
তারাপীঠের ক্ষেত্রে এমনিতেই ভর্তুকি দিয়ে হেলিকপ্টার চালানো হচ্ছে। উপরি পাওনা হিসেবে হেলিকপ্টারের যাত্রীদের মন্দিরে ঢুকে সরাসরি প্রতিমা দর্শন করানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দু’হাজার টাকায় হেলিকপ্টারে করে অনেকেই তারাপীঠ যেতে রাজি না হলেও ‘ভিআইপি’ মর্যাদায় সরাসরি মন্দিরের ভিতরে প্রবেশের সুবিধের জন্য এক শ্রেণির দর্শনার্থী হেলিকপ্টারের টিকিট কাটতে পারেন। সাধারণত, তারাপীঠে পুজো দিতে প্রতি শনিবার ভিড় জমে। তাই ঠিক হয়েছে, সপ্তাহে শুধু শনিবার তারাপীঠে হেলিকপ্টার চালানো হবে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, রামপুরহাটে বাইপাসের ধারে হেলিপ্যাড তৈরি হচ্ছে। ২৫ জুলাই শনিবার কলকাতা-তারাপীঠ কপ্টার চালু হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। বেহালা থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় হেলিকপ্টার উড়বে। তারাপীঠে পৌঁছবে সওয়া দশটা। ফের বেলা আড়াইটেয় তারাপীঠ থেকে উড়ে বেহালায় ফিরবে।
হলদিয়া-দুর্গাপুর-শান্তিনিকেতন বাতিল করে দিলেও গঙ্গাসাগর, মালদহ ও বালুরঘাটে নিয়মিত হেলিকপ্টার চালানো হবে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, প্রতি রবিবার সকালে বেহালা থেকে হেলিকপ্টার প্রথমে গঙ্গাসাগর যাবে। সেখান থেকে বেহালায় ফিরে উড়ে যাবে দিঘা। এ ছাড়া, প্রতি বুধবার যেমন বেহালা থেকে মালদহ ও বালুরঘাট কপ্টার যাচ্ছে, সে রকমই যাবে। মায়াপুরেও এই পরিষেবা চালানোর কথা
ভাবা হচ্ছে। তবে, তার দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি।
পবনহংসের এই হেলিকপ্টারটি রাজ্য সরকার ভাড়া নিয়েছে মাসে ৪০ ঘণ্টার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী যতক্ষণ চড়েন তার বাইরে হেলিকপ্টারটিকে চুপ
করে বসিয়ে না রেখে সেটাই ভাড়ায় খাটাচ্ছে রাজ্য সরকার। অবশ্যই ভর্তুকি দিয়ে। পরিবহণ কর্তাদের কথায়, এ ভাবে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা এলে তো লাভ-ই।
সম্প্রতি এই হেলিকপ্টার বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে নিয়ে হলদিয়া গিয়ে বিপদে পড়ে। মাটিতে ফেলে রাখা কার্পেটের তলা থেকে প্লাস্টিক উড়ে হেলিকপ্টারের পাখার কাছে চলে যায়। তদন্তে
নামে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। জানা যায়, হেলিকপ্টার ওঠানামার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা হয়নি সে দিন। বলা হয়, এ বার থেকে রাজ্যের যেখানেই পবনহংসের হেলিকপ্টার যাক না কেন, সব জায়গায় বিমান পরিবহণের নিয়ম সঠিক ভাবে মানতে হবে। জানা গিয়েছে, দিঘা ও তারাপীঠে হেলিপ্যাড বানানোর ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, ডিজিসিএ খতিয়ে দেখবে।