ঝাঁকুনি সামলানোর ‘বাফার’ উধাও, প্ল্যাটফর্মে ধাক্কা মেরে বেলাইন ট্রেন

দুর্ঘটনার জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বাতিল হয় কিছু ট্রেন। অফিসমুখী যাত্রীরা চূড়ান্ত দুর্ভোগে প়ড়েন। দুপুরের পরে ধীরে ধীরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

বিপর্যয়: বিপত্তি এ ভাবেই। বুধবার শিয়ালদহ স্টেশনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ট্রেন প্রান্তিক স্টেশনে ঢোকার পরে তার গতি ও গতিজাড্যের ঝক্কি-ঝামেলা বুক পেতে নেওয়ার জন্য তৈরি থাকে প্ল্যাটফর্মের জোড়া বাফার। কিন্তু তারা না-থাকলে?

Advertisement

না-থাকলে কী হয়, বুধবার সকালে টের পেলেন শিয়ালদহ স্টেশনে ঢোকা সোনারপুর লোকালের যাত্রীরা। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ ট্রেনটি ঢুকছিল ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। যাত্রীরা আসন ছে়ড়ে পৌঁছে যান দরজার সামনে। হঠাৎ বিকট শব্দ। ধুন্ধুমার ধাক্কা। মারাত্মক ঝাঁকুনি! কেউ হুমড়ি খেয়ে পড়লেন কামরায়, কেউ ছিটকে সটান প্ল্যাটফর্মে। লাইন থেকে বেরিয়ে গেল একটি কামরা। কেউ মারাত্মক ভাবে আহত না-হলেও অনেক যাত্রীরই চোট লেগেছে। এই দুর্ঘটনার পরে শিয়ালদহ শাখায় যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে ফের উঠছে প্রশ্ন।

দুর্ঘটনার জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বাতিল হয় কিছু ট্রেন। অফিসমুখী যাত্রীরা চূড়ান্ত দুর্ভোগে প়ড়েন। দুপুরের পরে ধীরে ধীরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

পরিদর্শনের পরে রেলকর্তাদের অনেকে জানান, ওই প্ল্যাটফর্মে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ব্যবস্থার গোড়াতেই গলদ রয়েছে। কারণ, শিয়ালদহ বা হাওড়ার মতো প্রান্তিক স্টেশনগুলিতে ট্রেনের ব্রেক যথাযথ ভাবে কাজ না-করলেও দুর্ঘটনা যাতে না-ঘটে, সেই জন্য ‘বাফার’-এর ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এ দিন যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষে সিমেন্টের দেওয়াল এবং কাঠের পাটাতন থাকলেও বাফার ছিল না। তার ফলে ট্রেনটি ধাক্কা মারার পরে মারাত্মক ঝাঁকুনি লেগেছে। ঝাঁকুনির চোটে ট্রেনের দ্বিতীয় কামরাটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। সমরেশ নস্কর নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘ট্রেন তো আস্তেই ঢুকছিল। আচমকা ধাক্কায় কামরাতেই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম!’’

রেল সূত্রে জানানো হয়, প্ল্যাটফর্মের যেখানে ট্রেন দাঁড়ানোর কথা, তার থেকে কিছুটা দূর পর্যন্ত লাইন থাকে। লাইনের শেষ প্রান্তে কংক্রিটের দেওয়ালে কাঠ লাগিয়ে তার উপরে মোটা নলের মতো ‘বাফার’ থাকে। ট্রেনের সামনেও থাকে ঠিক একই মাপের বাফার। সব বাফারেরই ভিতরে থাকে মোটা স্প্রিং। সেই জোড়া স্প্রিং আকস্মিক ধাক্কার অভিঘাত সহ্য করে নিতে পারে।

শিয়ালদহের ওই প্ল্যাটফর্মের বাফার গেল কোথায়?

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘বাফার কেন ছিল না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’’ তবে রেলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, মেরামতির জন্য বাফার খোলা হয়েছিল। তার জায়গায় দ্বিতীয় কোনও বাফার লাগানো হয়নি।

প্রশ্ন উঠছে, বিকল্প বাফারের ব্যবস্থা না-করে পুরনো বাফার খোলা হল কেন? ক্ষুব্ধ যাত্রীদের প্রশ্ন, দিনের পর দিন এমন গাফিলতি কী ভাবে নজর এড়িয়ে গেল রেলকর্তাদের?

সদুত্তর মিলছে না। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রেনের চালক ও গার্ডের ভুলে। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় চালক ঠিকমতো ব্রেক কষেননি। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় ট্রেনের গতি স্বাভাবিক (ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার)-এর থেকে বেশি ছিল। চালক ও গার্ডকে সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। চালকের দাবি, ট্রেনের ইলেক্ট্রো-নিউম্যাটিক ব্রেক ঠিকমতো কাজ করেনি। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য চালককে বি আর সিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন না বলেই চিকিৎসকেরা জানান রেলকর্তাদের। নারকেলডাঙা কারশেডে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।

চালকের দায় কতটা, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কিছু রেলকর্তা বলছেন, সময়ে ব্রেক কষতে না-পারাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তবে কোনও কারণে চালকের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে বা যান্ত্রিক ত্রুটিতে ব্রেক কষতে দেরি হলে যাতে দুর্ঘটনা না-ঘটে, সেই জন্যই বাফার বসানো হয়। তাই এ ক্ষেত্রে সেই বাফার না-থাকার দায় কিন্তু শিয়ালদহ ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্তারা এ়ড়াতে পারেন না বলে রেলের প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু কর্তার অভিমত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement