প্রতীকী ছবি।
বন্ধুর সঙ্গে চড়কের মেলা থেকে ফেরার পথে বীরভূমের এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল বৃহস্পতিবার। রবিবার জেলায় এসে সেই নির্যাতিতা ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। এ দিনই জেলায় এসে লীনাদেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির মহিলা মোর্চার প্রতিনিধিরা।
লীনাদেবী-সহ চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এ দিন একটি সরকারি সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতিতা ও তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে। নির্যাতিতার অনুমতি নিয়ে তার বয়ানও রেকর্ড করেন তাঁরা। পরে লীনাদেবী জানান, নির্যাতিতা তাঁদের জানিয়েছে ওই রাতে সে ও তার বন্ধুর পথ আটকেছিল চার জন। তারা নাবালিকা ও তার সঙ্গীকে ধমকায় ও জোর করে টেনে নিয়ে যায়। লীনাদেবী বলেন, ‘‘মেয়েটির বক্তব্য, চার জনের মধ্যে তিন জনের বয়স কম। মেয়েটির চেয়ে ছোট বা তারই বয়সী হবে। তাদেরকে সে মারধর করে সরিয়ে দেয়। কিন্তু আর এক জনকে সে সরাতে পারেনি। সে মেয়েটির সঙ্গে অসভ্যতা করেছে।’’ লীনাদেবীর সংযোজন, ‘‘আমি জিজ্ঞাসা করলেও ও এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে স্বচ্ছন্দ নয়। আমরা ডাক্তারি রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বলতে পারব, মেয়েটি যতটুকু বলেছে তার বাইরে আরও কিছু ঘটেছে কি না।’’
এ দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে জেলায় আসে বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি তনুজা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল। নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে সার্কিট হাউসেও আসেন তাঁরা। সেখানেই তনুজাদেবী বলেন, “দু’দিন আগে পুলিশ বলেছিল, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে অথচ আজ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলছেন ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক জন। দফায় দফায় বয়ান বদলানোর কী মানে?’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানান, আইন অনুযায়ী ধর্ষণে সরাসরি অভিযুক্তের সঙ্গীরাও গণধর্ষণেই অভিযুক্ত। এ ক্ষেত্রেও গণধর্ষণের অভিযোগে এবং পকসো আইনে মামলা হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ নিয়ে লীনাদেবী কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ঘটনার তিন দিন পরেও কেন অভিযুক্তেরা ধরা পড়েনি সেই অভিযোগেও এ দিন সরব হয় বিজেপি। জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “শনিবার ফরেন্সিক দল সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। সিআইডির তরফেও অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণের জন্য স্কেচ বানানো হয়েছে। আশা করছি, আমরা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারব।’’ বীরভূমের বিধায়ক তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপি ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি করছে। পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত করছে। তা সত্ত্বেও বিজেপি আগ বাড়িয়ে অশান্তি বাধানোর জন্য বারবার আসছে।’’
ঘটনার তদন্তে পুলিশ কয়েক জন আদিবাসী যুবককে আটক করায় রবিবার সন্ধ্যায় থানায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের কয়েকটি গ্রাম থেকে চার জন ও পূর্ব বর্ধমান লাগোয়া একটি জায়গা থেকে এক আদিবাসী যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এসসি এসটি ওবিসি ও সংখ্যালঘু জয়েন্ট ফোরামের সভাপতি বৈদ্যনাথ সাহার দাবি, “তদন্তের নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিরীহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে আটকে রাখা হচ্ছে, যার ফলে আদিবাসী সমাজের সম্মানহানি ঘটছে।” জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রকৃত দোষীরা ধরা পড়বেই।”