Swastha Sathi

Swastha Sathi: জোড়া চাপে কোপ বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর রোগী ভর্তিতে, ভোগান্তি পরিবারের

অতি জটিল কেসের ক্ষেত্রে জরুরি ভর্তি, দুর্ঘটনায় আহতদের ভর্তি, জরুরি অস্ত্রোপচারের রোগী ভর্তির ব্যাপারেও পিছিয়ে আসতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ০৬:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে চালু করা নতুন কিছু নিয়ম এক দিকে। অন্য দিকে প্রায় তিন মাস ধরে স্বাস্থ্যসাথীর টাকা বকেয়া। এই সাঁড়াশি চাপে রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় রোগী ভর্তির সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। বস্তুত, রোগী ভর্তি কমিয়ে দিতে তারা বাধ্য হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ওই সব হাসপাতাল।

Advertisement

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ‘আনস্পেসিফায়েড ক্যাটেগরি’ তুলে দেয়। মেডিসিন বিভাগের অধীন অধিকাংশ রোগীর চিকিৎসা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এই ক্যাটেগরিতেই করা হত। সরকারের যুক্তি ছিল, এই ক্যাটেগরিতে খরচের হার আগে থেকে নির্দিষ্ট করে না-দেওয়ায় অনেক বেসরকারি হাসপাতাল অধিকাংশ ‘কেস’ বা রোগীকে এই ক্যাটেগরিতে ফেলে যথেচ্ছ বিল করছিল। কিন্তু এটি তুলে দেওয়ায় বেসরকারি হাসপাতাল জরুরি ও মেডিসিন বিভাগে রোগী ভর্তি অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দিয়েছে। দুর্ভোগে পড়ছে আমজনতা। সরকারি প্রকল্পের সুবাদে দ্রুত ও যথাযথ পরিষেবার আশায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে হাজির হলেও বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি কমিয়ে দেওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন অনেকেই।

আবার স্বাস্থ্যসাথীতে দৈনিক খরচের সীমা তিন হাজার টাকায় বেঁধে দেওয়ায় অতি জটিল কেসের ক্ষেত্রে জরুরি ভর্তি, দুর্ঘটনায় আহতদের ভর্তি, জরুরি অস্ত্রোপচারের রোগী ভর্তির ব্যাপারেও পিছিয়ে আসতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে। কারণ, একটু নামী হাসপাতালে জটিল বা সঙ্কটজনক কেসের চিকিৎসা দৈনিক তিন হাজার টাকায় হয় না।

Advertisement

সর্বোপরি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রায় তিন মাসের টাকা (প্রায় ২০০ কোটি) বকেয়া রেখেছে সরকার। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় রোগী ভর্তির সংখ্যা না-কমিয়ে তাদের উপায় নেই বলে জানিয়েছে অধিকাংশ নামী বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম।

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, গত সেপ্টেম্বরের পর থেকে নামী হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যসাথীতে ভর্তির ঘটনা কমতে শুরু করেছে। কিছু হাসপাতাল গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রোগী ভর্তি করলেও ২০২২-এর জানুয়ারির পরে তা থেকে বিরত থাকছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে কোভিডের একটা ঢেউ এসেছিল। সেই জন্য অনেক হাসপাতালে ভর্তি কম হয়েছে। তবে জানুয়ারিতেও ভর্তি কম হওয়াটা উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি দেখছে।’’ বকেয়া টাকার ব্যাপারে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কুণাল সরকার বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এমন একটা রাজ্য, যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবার ৫০ শতাংশ দেয় সরকারি ক্ষেত্র আর বাকি ৫০ শতাংশ মেটায় বেসরকারি ক্ষেত্র। এই পরিষেবা চালাতে সরকারের যদি বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা লাগে, বেসরকারি ক্ষেত্রেরও তো সেই একই টাকা লাগার কথা। সরকার যদি নানা ভাবে সেই টাকা আসার পথ বন্ধ করে দেয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলি তা হলে সেই টাকা তুলবে কোথা থেকে? কী করে পরিষেবা দেবে তারা?’’

কুণালবাবু জানান, গত সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্যসাথীর নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পরেই অধিকাংশ হাসপাতাল ওই প্রকল্পে মেডিসিনের কেস, হার্নিয়া, গলব্লাডার, হাউড্রোসিল, শিশুদের বেশ কিছু অস্ত্রোপচার, অধিকাংশ স্ত্রীরোগের কেস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী দিয়ে সস্তার প্রচারের গিমিক তৈরি হয়েছিল। এখন সেটা ভেঙে পড়ছে। জলীয় বাষ্পের মতো উবে যাচ্ছে। সরকার স্বাস্থ্যসাথীতে টাকাও দেবে না আবার কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পও এ রাজ্যে চালু করতে দেবে না। এটা কেমন কথা!’’

হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন হাসপাতাল জানিয়েছে, হৃদ্‌রোগের অনেক রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে ভর্তি করে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি বা অস্ত্রোপচার করতে হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় সেটা করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন প্রয়োজন হচ্ছে। সেই অনুমোদন আসতে দু’দিন লেগে যাচ্ছে। তার উপরে দৈনিক হাসপাতালের খরচ তিন হাজার টাকার থেকে বেশি করা যায় না। ফলে স্বাস্থ্যসাথীতে কেস নেওয়াই কার্যত বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement