জন্মদিনে সৌরভকে উপহার মমতার। নিজস্ব চিত্র।
হতে পারত দিদি বনাম দাদা। হয়ে গেল দিদি এবং দাদা।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে বেহালার বাড়িতে চলে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সৌরভ, যিনি বিধানসভা ভোটে সরাসরি বিজেপি-র হয়ে মমতার বিরুদ্ধে যুযুধান হতে পারতেন বলে গোটা দেশে তুমুল জল্পনা ছড়িয়েছিল।
ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই প্রথম মহারাজের বাড়িতে গেলেন মমতা। ওয়াকিবহাল মহল আরও বলছে, সামাজিকতার মোড়কে হলেও এই শুভেচ্ছা সফরে খানিক রাজনীতির রং-ও লেগেছে।
তৃণমূলের একাংশের অনুমান, মমতা সৌরভকে রাজ্যসভার সাংসদের পদ নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও দিয়ে থাকতে পারেন। দীনেশ ত্রিবেদী এবং মানস ভুঁইয়ার ছেড়ে আসা দু’টি আসনই এখনও পর্যন্ত ফাঁকা আছে। তবে তৃণমূলেরই শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ সেই সম্ভাবনা এবং জল্পনাকে সপাটে মাঠের বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, মমতার বেহালা সফর একেবারেই সৌজন্য এবং শুভেচ্ছা সংক্রান্ত। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। থাকবেও না।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর অবশ্য দাদা কিছু বলেননি। নীরব থেকেছেন দিদিও।
তবে দাদা-দিদিকে নিয়ে রাজনীতির জল্পনা তৈরি হওয়ার অবকাশ একেবারে যে নেই, তা-ও নয়।
রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপি যে সৌরভকে সঙ্গে চেয়েছিল, তা গোটা বাংলা জানে। সৌরভের ঘনিষ্ঠরা জানেন, তিনিও রাজনীতিতে নেমে পড়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি। বস্তুত, বিভিন্ন হিতৈষীর পরামর্শও চেয়েছিলেন। রাজনীতিতে সৌরভের একেবারেই উৎসাহ নেই, একথা বললে সত্যের অপলাপ হবে। হাজার হোক, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের যে মসনদ আলো করে তিনি বসে আছেন, তাতেও প্রত্যক্ষ রাজনীতির যোগ রয়েছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, শেষ প্রহরে কর্নাটকের ব্রিজেশ পটেলকে ছিটকে ফেলে সৌরভ যে বিসিসিআই সভাপতি হয়ে বসলেন, তার পিছনেও অমিত শাহের হাত ছিল বলে শোনা গিয়েছিল। অমিত-তনয় জয় শাহ বোর্ডে সৌরভের ডেপুটি হওয়ায় যে ধারণা আরও জমি পেয়েছিল। যদিও অমিত এবং সৌরভ উভয়েই প্রকাশ্যে সে কথা বারবার উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু জল্পনা তাতে থামেনি। শেষপর্যন্ত অবশ্য সৌরভ বিভিন্ন ব্যক্তিগত কারণে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন। মাঝখানে তাঁর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাও মহারাজকে সেই ঝুঁকি নেওয়া থেকে অনেকটাই বিরত রেখেছিল।
সৌরভের বাড়িতে মমতা। নিজস্ব চিত্র।
কারণ যা-ই হোক, দাদা ভোটের ময়দানে তাঁর বিরুদ্ধে নেমে না পড়ায় অখুশি হননি দিদি। তৃণমূলের অন্দরের একাংশের কথা বিশ্বাস করতে হলে মমতা খানিক প্রীতই হয়েছিলেন সৌরভের সিদ্ধান্তে। যদিও এরও কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন কোনও স্তরেই মেলেনি।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠমহলের একাংশের দাবি, সেই প্রীতি থেকেই মমতার বৃহস্পতির বারবেলায় বেহালা সফর। তিনি যে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে আসতে চান, তা আগেই সৌরভকে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দিদির সঙ্গে বরাবরই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় দাদাও সানন্দে রাজি হয়ে যান। মুখ্যমন্ত্রী সৌরভ এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে বেরোনর পর থেকেই রাজ্যসভা সংক্রান্ত জল্পনা ছড়াতে শুরু করে। যদিও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই এখনও পর্যন্ত সেই সম্ভাবনা সজোরে নাকচ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ মমতা সৌরভের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। সৌরভও পাল্টা ধন্যবাদ দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মমতাকে শাড়িও উপহার দেন সৌরভ। যা পছন্দ করে কিনে রেখেছিলেন সৌরভের স্ত্রী ডোনা। সৌরভের মা নিরূপাদেবীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন মমতা। তার পর সৌরভ কন্যা সানা-সহ গোটা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। মমতাকে নিজের বাড়ি ঘুরিয়েও দেখান সৌরভ।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যান সৌরভের বাড়ি থেকে।
প্রতি বারই জন্মদিনে সৌরভকে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী। বাড়িতে শুভেচ্ছাবার্তার সঙ্গে ফুল-মিষ্টিও পাঠান। কিন্তু এবারই প্রথম তিনি নিজে সৌরভকে বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যা যথেষ্ট ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
এর আগে সৌরভও একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নবান্ন গিয়েছেন। সৌরভ হাসপাতালে থাকার সময়েও মমতা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মমতাকে এ ভাবে আলাদা করে সৌরভকে বাড়ি গিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এর আগে দেখা যায়নি। সৌরভের জন্য তিনি মিষ্টি এবং হলুদ গোলাপের তোড়া নিয়ে গিয়েছিলেন। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়।
মমতার পাশে সানা এবং সৌরভ। নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার ৪৯তম জন্মবার্ষিকী ছিল সৌরভের। সকাল থেকে তাঁর বাড়ির সামনে ছিল ভক্তদের ভিড়। অনেকেই এসেছিলেন দূরদূরান্ত থেকে। দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা।
প্রত্যেকেই এক বার সামনে থেকে প্রিয় দাদাকে দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। সেই আশা পূর্ণ হয় বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেন সৌরভ। সঙ্গে সঙ্গেই সোল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন অনুরাগীরা।
এক ভক্ত সৌরভের হাতে তাঁর আকা একটি ছবি তুলে দেন। পাল্টা সৌরভও তাঁকে অটোগ্রাফ দেন। পরে ওই অনুরাগী জানান, তাঁর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল।
সৌরভ বলেন, “আরও একটা বছর পার করলাম। এখন আমি পুরোপুরি ফিট। খুব ভাল আছি। কোভিড এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। আমি নিজেও সাবধানে রয়েছি। সবাইকে এখনও সাবধানে থাকতে হবে সকলকে।’’